প্রবাদ-প্রবচন লোক সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ দুইটি প্রায় একই অর্থে প্রয়োগ হলেও এদের মধ্যে সামান্য ভিন্নতা রয়েছে। প্রবাদ হচ্ছে লোকসমাজ বা কালের সৃষ্টি। আর ‘প্রবচন’ হল সমাজের সৃজনশীল মানুষের সৃষ্টি যেমন কবি,সাহিত্যিক ইত্যাদি।
যা শুধু মুখে মুখেই প্রচলিত, কোন লিখিত রূপ নেই সেটাই প্রবাদ।কিন্তু প্রবচনের লিখিত রূপ আছে এবং কালক্রমে সেটা সবাই মুখে মুখে ব্যবহার করে। প্রবাদ আকারে ছোট হলেও প্রবচন কিন্তু বড়।
তবে প্রবাদে উপমা, বক্রোক্তি, বিরোধাভাস প্রভৃতি অলংকারযোগে গঠিত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবাদ-প্রবচন জেনে নেই-
অ
- অকর্মা নাপিতের ধামা ভরা ক্ষুর– অক্ষমতার দুর্বলতা ঢাকতে অকর্মারা বেশি ভড়ং দেখায়; অকস্মাৎ/বিনামেঘে বজ্রাঘাত- অপ্রত্যাশিতভাবে কোন বিপদের সংঘটন।
- অকারণে হৈ চৈ– অহেতুক চিন্তা;
- অকালকুষ্মাণ্ড– অকালে জাত চালকুমড়ার পূজায় বলি হয় না ভাবার্থে- অকর্মণ্য; অকেজো; কোন কাজের নয় ইত্যাদি।
- অকালে খেয়েছ কচু, মনে রেখ কিছু কিছু– মানুষের জীবনে সুখের দিন আসলে দুঃখের দিনগুলি ভুলে যায়, এটা ঠিক নয়।
- অকাল গেল সুকাল এল পাকল কাঁটাল কোষ, আজ বন্ধু ছেড়ে যাও, দিয়ে আমার দোষ- অসময়ে উপকার পেয়ে নানা অজুহাতে সুসময়ে উপকারীকে ভুলে যাওয়া।
- অকৃতজ্ঞের নরকবাস- অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির কঠোর শাস্তি প্রাপ্য;
- অকালে না নোয় বাঁশ পাকলে করে ট্যাঁশট্যাঁশ- কচি অবস্থায় বাঁশ না নোয়ালে পাকলে তা কটকট শব্দ করে; অর্থাৎ শিশুকালে নীতিশিক্ষা না দিলে বয়সকালে হাজার উপদেশ দিলেও তা বৃথা যায়।
- অকালের তাল বড়ই মিষ্টি- অকালে দুষ্প্রাপ্য জিনিস তৃপ্তিবোধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- অকেজো বউ লাউ কুটতে দড়- যে কোন কাজ জানে না সে সহজ কাজটা আগে বেছে নেয়।
- অকেজোর তিন কাজ বড়, ভোজন ক্রোধ নিদ্রা দড়- অকম্মাদের মাঝে তিনটি বড় গুণ থাকে বেশি খায়; বেশি রাগ দেখায়; আর বেশি ঘুমায় ।
- অক্ষমের অজুহাত খাড়া- অক্ষমের অজুহাতের অভাব হয় না।
- অগভীর জলে সফরি ফরফরায়- অল্পবিদ্যার অধিকারী ব্যক্তিরা সর্বদা বেশি বিদ্যার জাহির করে;
- অগা লোকের কাজ ঝকমারি- অকাজের লোকেরা কাজের ক্ষেত্রে বিভ্রাট সৃষ্টি করে।
- অগুণ মানুষ গুণ না চিনে, মূষা না চিনে বিড়ালী;
- অপ্রেমী যে প্রেম না চিনে, কাঠ না চিনে কুড়ালি- বুদ্ধিশুদ্ধি কম থাকা মানুষের বড় অভাব চেতনার।
- অগুরু চন্দন ফেলে চায় শেওড়া কাঠ, কোকিলের ধ্বনি ফেলে বানরের নাট- ভালো ছেড়ে মন্দের প্রতি মানুষের অহেতুক আকর্ষণ থাকে; স্বভাবশতঃ মানুষ মন্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
- অগ্নি, ব্যাধি ও ঋণ, রেখো না তিনের চিন (চিহ্ন)- আগুন, ব্যাধি ও ঋণের শেষ রাখতে নেই; থাকলে এগুলি ক্রমশ বাড়তে থাকে; আগুন নিভিয়ে ফেলা, রোগ সারিয়ে ফেলা এবং ঋণ শোধ করে ফেলা আশু কর্তব্য।
- অঘটির ঘটি হল, জল খেতে খেতে প্রাণটা গেল- প্রাপক প্রথম প্রাপ্যে আনন্দের আতিশয্যে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে; সমতুল্য- ‘অদন্তের দাঁত হল, কামড় খেতে খেতে প্রাণটা গেল’।
- অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার-; আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে ফললাভের সম্ভাবনা সামান্য ।
- অজীর্ণে ভোজনং বিষমং- হজমের না হতেই পুনরায় ভোজন বিষ তুল্য।
- অজীর্ণে ভেষজং বারি; জীর্ণে বারি বলপ্রদম্- জল হলো বদহজমের একমাত্র ওষুধ; জল দুর্বলকে শক্তি যোগায়।
- অজ্ঞতাই ভক্তি করে, ভক্তি হলো অজ্ঞতার কন্যা- অজ্ঞান ও ভয় থেকে মানুষের মনে ভক্তিভাবের উদয় হয়।
- অজ্ঞাতকুলশীলস্য বাসো দেওয়া ন কস্যচিৎ- কখনো অচেনা লোককে গৃহে স্থান দিতে নেই।
- অজ্ঞানে করে পাপ জ্ঞান হলে মনস্তাপ- শিশুবয়সে না বুঝে ভুল হয়ে যায়; বয়স বাড়লে জ্ঞান হলে সেগুলি শুধরে নেওয়া সম্ভব; কিন্তু স্বজ্ঞানে করা পাপ কখনো শুধরানো যায় না;
- অজ্ঞানে বাপান্ত করে জ্ঞানবানে তাই কি ধরে?- অজ্ঞরা যদি কিছু দোষ করে থাকে; জ্ঞানীরা সেই দোষ সবসময় ধরে না
- অজ্ঞানের কালে জানে না, অমানুষের কালে মানে না- শিশুরা বুঝতে পারে না বলে দোষ করে; বয়স্করা কিন্তু দোষকে অগ্রাহ্য করে; অপকর্মকে অপকর্ম বলে স্বীকার করে না; মানুষের স্বভাবই হল দোষ করা; স্বভাবদোষে মানুষ অপকর্ম করে।
- অতি আশ সর্বনাশ- অতি আশা প্রবঞ্চনা করে;– বেশি লোভ করলে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; সমতুল্য- ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’;’খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে/হেলে গরু কিনে’ ইত্যাদি; পাঠান্তর- ‘অতি আশায় মরে চাষা’।
- অতিকথায় বার্তা নষ্ট- বাকচাতুর্যে মূল বক্তব্য হারিয়ে যায়;
- অতি ক্ষুধা যার হাড় কাটা তার- অতিরিক্ত ভোজনে শরীর নষ্ট হয়।
- অতি ঘরন্তি না পায় ঘর অতি বরন্তী না পায় বর- ভাগ্যদোষে অতি নিপুণা ঘরণীও সংসার পাততে পারে না এবং পতি কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষাপ্রাপ্ত বরাঙ্গনাও বর পায়।
- অতি চতুরের ভাত নেই, অতি সুন্দরীর ভাতার নেই– বেশি চালাক হলে খাবার জোটে না, দেখতে বেশি সুন্দরী হলে বাছবিচারে সময় চলে যায়; বর জোটানো মুশকিল হয়ে যায়;
- অতি চালাকের গলায় দড়ি, অতি বোকার পায়ে বেড়ি- বেশি চালাক ও বেশি বোকা- উভয়ই ব্যক্তিই বিপদে বেশি পড়ে;
- অতি জ্বালে ব্যঞ্জন নষ্ট- বেশি জ্বাল দিলে দ্রব্যগুণ নষ্ট হয়; কোন কিছুতেই বাড়াবাড়ি ভাল নয়।
- অতি চেনার কদর নেই- সহজে যে জিনিস পাওয়া যায়, তার মূল্য থাকে না;
- অতিদর্পে হত লঙ্কা- অহংকার পতনের মূল কারণ;
- অতি পিরিত যেখানে অতি বিচ্ছেদ সেখান- ভালবাসা বেশি হলে বিচ্ছেদের আশঙ্কা থাকে তাড়াতাড়ি।
- অতি পিরিত যেখানে, নিত্য যাবে না সেখানে;
- যদি যাবে নিত্যি, ঘটবে একটা কীর্তি- ভালোবাসা যেখানে বেশি থাকে সেখানে প্রতিদিন না যাওয়াই ভালো; না হলে কলঙ্ক বা বিরোধ ঘটার আশঙ্কা থাকে।
- অতিবড় ঘরণী না পায় ঘর, অতিবড় সুন্দরী না পায় বর- কোন বিষয়ে অনন্যসাধারণ হলে সবসময় তার জুড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না।
- অতিবুদ্ধির হাভাত- চালাকি করতে গিয়ে ভুলের কারণে ভাত জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়;
- অতিবড় সোদর (সহোদর ও সহোদরা) তিনদিন করবে আদর– যত ভাল সম্পর্কই হোক না কেন তার কাছ থেকে বেশি পাওয়া গেলেও আদর ক্রমশ কমতে থাকে।
- অতি ভালো, ভালো নয়- বেশি বাড়াবাড়ি শেষপর্যন্ত বিপদ ডেকে আনে;
- অতিবাড় বেড়ো না ঝড়েতে উড়াবে, অতি ছোট হয়ো না ছাগলে মুড়োবে- অহংকার যত বাড়তে থাকে পতন ততই নিকটে আসে; আবার বেশি নম্র হলেও অবহেলিত হবে;
- অতিভক্তি চোরের লক্ষণ- খারাপ উদ্দেশ্য সবার সামনে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাধু সাজার চেষ্টা।
- অতিমন্থনে বাসুকীর বিষ- উৎস কাহিনি- ক্ষীরোদসাগর মন্থনে প্রথমে অমৃত ওঠে; কিন্তু অমৃত নিয়ে দেবাসুরে ঝগড়া শুরু হলে দ্বিতীয়বার সমুদ্রমন্থন করা হয়; এবার ওঠে বিষ; কোন ভাল দ্রব্য নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে দ্রব্যগুণ নষ্ট- অনেকসময় বারবার শোনা ভাল কথাও মন্দ মনে হয়; সমতুল্য- ‘লেবু চটকালে তেতো হয়’; পাঠান্তর- ‘অতিমন্থনে বিষ উঠে’; ‘অতিমন্থনে মিঠা তিতা’।
- অতিযত্নে মরণফাঁদ- বেশি যত্ন নিলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়; কথায় আছে, যত্ন করলে রত্ন মেলে।
- অতিশয় ভালো নয় বুদ্ধি হলেই পড়তে হয়- বেশি বুদ্ধি খাটালে বিনাশ অনিবার্য; একই অর্থ বোঝায়- ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’।
- অতি সাধ অতি বিষাদ- বেশি আশা করলে তা যদি পূর্ণ না হয় মনে তখন বিষাদে ভরে যায়; ক্রিয়ার সমান প্রতিক্রিয়া।
- অতীত থেকে শিক্ষা নাও, ভবিষ্যতে ভুল হবে না- অতীতকে জানার চেষ্টা করলে ভবিষ্যৎ জানা যায়।
- অতুভুক্তিরতীবোক্তি সদ্য তীব্র প্রাণাপহারিণী- অপরিমিত খাদ্য গ্রহণে স্বাস্থ্যহানি হয়।
- অত্তাস কুত্তা বত্তাস ভূঁকৈ- ভীতু কুকুর বাতাসের শব্দে ভয় পেয়ে ঘেউঘেউ করে;অনাবশ্যক ভয় পেয়ে ভীতু লোকেরা চিৎকার জুড়ে দেয়; সমতুল্য- ‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’।
- অদন্তের দাঁত হল, কামড় খেতে খেতে প্রাণটা গেল- শিশুদের যখন প্রথম দাঁত উঠে তখন কামড়ে পাগল করে দেয়; কোন নতুন দ্রব্য পেয়ে অত্যধিক ব্যবহার করলে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়;
- অদৃষ্টের কিল ভূতেও কিলোয়- অদৃষ্ট খারাপ হলে নির্বিচারে সবাই ভোগায়; পাঠান্তর- ‘অদৃষ্টের কিল পুতেও (ছেলে) কিলোয়’।
- অদন্তের হাসি দেখতে ভালোবাসি- বিনা দাঁতে বুড়া-বুড়োদের হাসি দেখে কৌতুক করে এই প্রবাদটি বলা হয়।
- অদৃষ্টে করলা ভাতে, বীচি কচকচ করে তাতে; পড়ল বীচি বুড়োর পাতে- যদি ভাগ্যে দুর্ভোগ লেখা থাকে তাহলে তো পোহাতে হবেই; দুর্ভাগাদের ভাগ্যে সুখ লেখা নেই।
- অধর্মবিষবৃক্ষস্য পচ্যতে স্বাদু কিং ফলম?- অধর্মরূপ বিষবৃক্ষে কী স্বাদু ফল ফলে?
- অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল- কপালে যা লিখা থাকে তা কেউ খণ্ডাতে পারে না; সেটা তো ঘটবেই;
- অধর্মের পথ বড়ই পিচ্ছিল- অধর্মের অর্থাৎ ভুল পথে চলতে গিয়ে একবার পড়লে সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন; নরকে গেলে সেখান থেকে আর ফেরা আসা যায় না।
- অধিক খেতে করে আশা, তার নাম বুদ্ধিনাশা- অধিক খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর; যারা পেটুক তারাই বেশি খায়।
- অধিক গর্জনে অল্প বর্ষণ- আড়ম্বর অনুসারে কার্য হয় না; যে বেশি বকে, সে কাজে বেশিদূর এগোয় না; সমতুল্য- ‘অতিমেঘে অনা/ফোঁটা বৃষ্টি’;’অনেক গর্জনে ফোঁটা বৃষ্টি’;’ঘেউঘেউ করা কুত্তা কদাচিৎ কামড়ায়’; ইত্যাদি।
- অধিক দিন থাকলে গাজন কে করত শিবের ভজন?– আধিক্যে সোনার মূল্যও হ্রাস পায়।
- অধিক/অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট- এক কাজে অনেক লোক জুটে গেলে মতভেদের কারণে কাজ পণ্ড হয় সমতুল্য- ‘অনেক রাঁধুনীতে ব্যঞ্জন নষ্ট’; ‘এক হেঁসেলে দুই রাঁধুনি, পুড়ে গেল তার ফেনগালুনি’;’ঘরের মধ্যে ঘর, সবাই মাতব্বর’;’ঠেলাঠেলির ঘর, খোদায় রক্ষা কর’;’দশ পাগলের ঘর, খোদায় রক্ষা কর’;’সাত সতীনের ঘর খোদায় রক্ষা কর’ ইত্যাদি। বিরুদ্ধ উক্তি- ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’।
- অনটনের সংসারে দুনো ব্যয়- অভাবগ্রস্তের সংসার খরচ নানাকারণে বেড়ে যায়। কথায় আছে, অভাব যখন আসে, একের পর এক আসতেই থাকে।
- অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে- যে কাজে অভ্যস্ত না, তাতে হাত দিলে প্রথমে একটু অস্বস্তিবোধ হয়;
- অনাবৃষ্টে রাজ্য মজে, পাপে মজে ধর্ম;
- কোটালে গৃহস্থ মজে, আলস্যে মজে কর্ম।-দেশের ক্ষতি হয় বৃষ্টি না হলে; ধর্ম বিপদগ্রস্ত হয় পাপে; লোকালয় বিপদগ্রস্ত হয় নদীর বাড়ে ; আর কর্ম নষ্ট হয় অলসতায়।
- অনুপস্থিতি হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে- দূরত্ব বেড়ে গেলে আকর্ষণের তীব্রতা বেড়ে যায়; কালিদাস তাঁর মেঘদূত কাব্যে তা ছত্রে ছত্রে বর্ণনা করে গেছেন। বিরুদ্ধ উক্তি- ‘চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল’।
- অনুরাগ বিনে গৌর আসবে কেনে?- প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে স্বর্গ রচিত হয়।
- অনুশীলনে পাথর ক্ষয় হয়– পরিশ্রম করলে অনেক কঠিন কাজও সম্ভব হয়;
- অনুরোধে ঢেঁকি গেলা- নিতান্ত বাধ্য হয়ে কোন কাজ শেষ করা।
- অনেক কালের ছিল পাপ ছেলে হল সতীনের বাপ- পাপ করলে শাস্তি পেতেই হবে; পাপ বাপকেও ছাড়ে না; পাপের ফল কোন-না-কোনভাবে ভোগ করতেই হয়;
- অনেক রাঁধুনিতে ব্যঞ্জন নষ্ট- এক কাজে অনেক লোক একসাথে হলে মতভেদের কারণে সে কাজ পণ্ড হয়;
- অনেক যদি মাছ পায় বিড়াল কাঁটা বেছে খায়- প্রয়োজনের বেশি উপলব্ধ হলে নির্বাচনের প্রশ্ন আসে।
- অনেক হল পাপ এবার ছাড়ো বাপ- ভোগবিলাস সারাজীবনে অনেক হয়েছে; দিন শেষে সব ছেড়ে ধর্মে কর্মে মন দাও।
- অনেক সুখ যদি কপালে ছেঁড়া কাঁথা কেন বগলে- কপালের দোষ দিয়ে লাভ নেই; মানুষ কর্মদোষে দুঃখ কষ্ট ভোগ করে।
- অন্তরে এত খলতা, মুখে তোর অতি শীলতা- বেশি প্রশংসা সন্দেহের সৃষ্টি করে; কথায় আছে অতিভক্তি চোরের লক্ষণ।
- অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল খোঁজা- বৃথা চেষ্টা করা, যা হওয়ার নয়;
- অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন- দিন ও রাত্রির প্রভেদ যে বোঝে না তার কাছে দিন রাত্রি দুই সমান।
- অন্ধের দোকানে কালা খরিদ্দার- সমান অপদার্থ;
- অন্ধের নড়ি, কৃপণের কড়ি- কৃপণের কাছে টাকাকড়ি আর অন্ধের কাছে লাঠি-সমান মূল্যবান।
- অন্ধের হস্তী দর্শন- পরিষ্কার ধারণা না নিয়ে শুধু অংশবিশেষ পর্যালোচনা করে কোন বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ মতামত ব্যক্ত করা ভুল।
- অন্নজলের নাড়ি কোটা- শিশুর মুখে ভাত দেয়া তথা অন্ন প্রাসনের বয়স হওয়া।
- অন্ন নাই যার ঘরে, তার মানে কি বা করে- হাড় হাভাতের কোন মানসম্মান নেই।
- অন্ন বিনা চর্ম গড়ি, তৈল বিনা গায়ে খড়ি– পেটে খাবার না পড়লে শরীরে সৌন্দর্য আসে না;
- অন্নপূর্ণা যার ঘরে, সে কাঁদে অন্নের তরে- দুরদৃষ্টের অভাবে চাষির মুখে অন্ন জোটে না।
- অন্নের জ্বালা বড় জ্বালা একদিনে লাগে তালা- পেটে ভাত না থাকলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়;
- অপদার্থ যেখান থেকে শুরু করে সেখানেই ফিরে আসে- অপদার্থের কাজের ফল শূন্যআ হয়।
- অপমানের পরাণ সম্মানকে ডরান- অতি নম্র প্রকৃতির মানুষ সম্মানকে সামান্য জ্ঞান করে।
- অপরের মন্দ নিজের হিত, না করিও কদাচিৎ- নিজের ভাল করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করার চিন্তাভাবনা পাপবোধের জন্ম দেয়।
- অপ্রিয় সত্য কথা বলিও না- অপছন্দের কথা কেউ শুনতে চায় না।
- অবলা বোলে দড়, অফলা ফলে দড়– শারীরিক বল যার কম থাকে, তার মুখ চলে বেশি;
- অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা- সামর্থ্যের বাইরে কখনো যেও না; সমতুল্য়- ‘আয় বুঝে ব্যয় করা’; ‘ওজন বুঝে চলা’; খাট ভাঙলে ভূমিশয্যা’; ‘কাপড় বুঝে জামা কাটা’; ‘যখন যেমন তখন তেমন’ ইত্যাদি।
- অবাক্ কল্লে নাকের নখে, কাজ কি আমার কানবালাতে- নাকের নথেই রূপ খুলেছে তখন কান পাশার আর প্রয়োজন নেই; কুরূপার সাজসজ্জার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
- অবাক কলির অবতার, ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার- অযোগ্যের হাতে উৎকৃষ্ট দ্রব্য দেখে খেদ বিস্ময় বা বেদনা প্রকাশ।
- অবিশ্বাস করে ঠকা থেকে বিশ্বাস করে ঠকা অনেক ভাল- অবিশ্বাস করে ঠকলে একটি বিশ্বাসী লোককে হারাতে হয়; বিশ্বাসী লোক হাজারে একটা হয়; সুতরাং কোনোভাবেই অবিশ্বাসকে মনে স্থান দেওয়া নেই।
- অবোধারে মারে বোধায়, বোধারে মারে খোদায়- চালাক বোকাকে ঠকায়; আর বিধাতার চালাক লোককে শাস্তি দেয়।
- অবোধের সাত খুন মাপ- অজ্ঞানকৃত অপরাধ ক্ষমার যোগ্য; পাগলের শাস্তি হয় না।
- অবোলা চলে বড় অফলা ফলে বড়- কথা না বলে পথ চলতে থাকলে, অনেকটা পথ যায়; যে গাছে ফল ধরে না সে গাছে একবার ফল ধরলে প্রচুর পরিমাণে ফলে।
- অভাগা যায় বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে- কপাল খারাপ হলে, যেখানে যাবে সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে যাবে; সমতুল্য- ‘অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়’;
- অভাগার গরু মরে শকুনের ভাগ্য বাড়ে- একজনের ক্ষতিতে অন্যজনের লাভ হয়; সমতুল্য- কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ’।
- অভাগীর লগনে চাঁদ নাই গগনে- অভাগি হলে ভাগ্যে পূর্ণিমার চাঁদ নয়, থাকে শুধু অমাবস্যার অন্ধকার।
- অভাবে স্বভাব নষ্ট- অভাব হলে অবস্থার চাপে ভালো মানুষও অসৎ হয়; সৎ থাকা খুবই কষ্টকর; সমতুল্য- ‘স্বভাবে করে না অভাবে করে’।
- অভাগিনী দুয়ো, নেটি পেটি সুয়ো- কোন লোকের দুই স্ত্রী থাকলে সুয়ো হয় স্বামী সোহাগিণী এবং দুয়ো হয় হতভাগিনী।
- অভাবে স্বভাব নষ্ট মুখ নষ্ট বরণে; ঝরায় ক্ষেত নষ্ট স্ত্রী নষ্ট মারণে- ব্রণ যেমন মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে; তেমনি অভাব মানুষ স্বভাব নষ্ট করে;
- অভাগিনীর দুটি পুত একটি দানা একটি ভূত- সৌভাগ্যবতীর পুত্র হয়; কিন্তু দুটো পুত্রই যদি বদ হয় তবে সে নারী অভাগিনী ছাড়া আর কিছু নয়।
- অভিজ্ঞতায় মানুষ বিজ্ঞ হয়- অভিজ্ঞতায় সিদ্ধ লোক সহজে বোকা হয় না।
- অভ্যাসে সয় অনভ্যাসে নয়- সহজে কোন কিছু হয় না; অভ্যাসেও আয়াস লাগে;
- অমাবস্যার প্রদীপ টিপটিপ করে- ঘোর অন্ধকারে প্রদীপের টিমটিমে আলো যথেষ্ট নয়।
- অর গুণ নাই বর গুণ আছে- অন্তর্গুণ নেই বহির্গুণ আছে; কোন ভাল গুণ নেই, শুধু মন্দ গুণ আছে; দুঃখ নাশের গুণ নেই, শুধু দুঃখ বৃদ্ধির গুণ আছে; সমতুল্য- ‘আর গুণ নাই ছার গুণ আছে’।
- অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম- রসিককেই শুধু রসের কথা বোঝে; অরসিকের কাছে বলা অর্থহীন; নির্গুণের কাছে গুণের কোন কদর নেই;
- অর্থ থাকলে অভাবের অভাব হয়- সম্পদের প্রয়োজনীয়তা সেই বোঝে, যার অভাব সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে;
- অর্থশালীর কাছে আইন আকাশের মত,
- অর্থহীনের কাছে আইন মাকড়সার জালের মত- যার অর্থ আছে আইন তার কাছে মনে হবে খোলা আকাশ; গরীব লোকেরাই আইনের জালে আটকে যায়।
- অর্ধসত্য মিথ্যা অপেক্ষা ভয়ংকর- অপূর্ণ সত্য, মিথ্যার থেকে বেশি ভয়াবহ।
- অলক্ষ্মীর নিদ্রা বেশি কাঙালের ক্ষুধা বেশি- অলক্ষ্মীদের ঘুম বেশি হয়; কাঙালরা শুধু খেয়েই যায়।
- অলস ভেড়া ভাবে তার পশম বড় ভারী- অলস লোক এতটাই অলস যে পাশ ফিরে শুতেও কষ্ট তার।
- অলভ্যের বাণিজ্যে কচকচিই সার– অকাজে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে ।
- অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর- অল্প শোকে মানুষ হা-হুতাশ করে, কিন্তু বেশি শোকে শোক প্রকাশের পথ না পেয়ে দুঃখী মূক, নিথর বা নিঃসাড় হয়ে যায়।
- অশুভস্য কালহরনম– অশুভ কাজে কালক্ষেপণ কর্তব্য।
- অশ্বত্থের ছায়াই ছায়া, মায়ের মায়াই মায়া– অশ্বত্থ গাছ বিরাট ও বিশাল; তার ছায়া সুশীতল; আশ্রয় নিতে হলে অশ্বত্থ গাছে মত মহতের কাছে নিতে হয়; মায়ের স্নেহ ও মমতারও কোন তুলনা হয় না; আসলের কাছেই আসল জিনিস পাওয়া যায়।
- অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ; সৎসঙ্গে স্বর্গবাস- সঙ্গদোষে মানুষ নষ্ট হয়; সঙ্গগুণে সম্মান বৃদ্ধি পায়।
- অসময়ে সকলে সই, শোনরে দুঃখ তোরে কই- দুর্ভাগ্যের সব ব্যথা গায়ে সয়ে গেছে।
- অসারের তর্জন গর্জন সার- গুণহীন অক্ষম ব্যক্তিরা বৃথা আস্ফালন করে; ‘গুণহীনের গুণহীন নয়’ প্রমাণের বৃথা চেষ্টা;
- অসি থেকে মসি বড়- শরীরের শক্তির থেকে বুদ্ধির শক্তি অনেক বেশি;
- অহিতে বিপরীত– খারাপ হতে গিয়ে ভাল হয়ে যাওয়া; দুর্ভাগ্য অনেক স্থলে সৌভাগ্যের কারণ হয়; সমতুল্য- ‘শাপে বর’; বিপরীত উক্তি- ‘হিতে বিপরীত’।
চলবে…