৩. তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসে পূর্বপদে বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থই প্রাধান হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন- বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন।
তৎপুরুষ সমাস বিভিন্ন প্রকার হয়। যথা-
নঞ্ তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসের পূর্বে না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) বসে তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে।
তাহলে কিছু নঞ্ তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- না আচার = অনাচার
- না কাতর = অকাতর
- না লৌকিক = অলৌকিক
- নয় ধর্ম = অধর্ম
- ন আদর = অনাদর
- নয় স্থির = অস্থির
- নাই সুখ যার = অসুখ
- ন অশন = অনশন
- ন চেনা = অচেনা
- নাই তমিজ = বেতমিজ
- ন কাল = অকাল
- নাই কাঁড়া = আকাঁড়া
উপপদ তৎপুরুষ সমাস
উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকেই উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে।
তাহলে কিছু উপপদ তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- জলে চরে যা = জলচর
- জল দেয় যে = জলদ
- পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ
- সত্য কথা বলে যে = সত্যবাদী
- ইন্দ্রকে জয় করেছেন যে = ইন্দ্রজিৎ
- ছেলে ধরে যে = ছেলেধরা
- পকেট মারে যে = পকেটমার
- হাড় ভাঙ্গে যাতে = হাড়ভাঙ্গা
- মাছি মারে যে = মাছিমারা
- গৃহে থাকে যে = গৃহস্থ
- ধামাধরে যে = ধামাধরা
- পাতা চাটে যে = পাতাচাটা
- ছার পোকা যা = ছারপোকা
- ঘর পুড়েছে যার = ঘরপোড়া
- বর্ণ চরি করে যে = বর্ণচোরা
- গলা কাটে যে = গলাকাটা
- পা চাটে যে = পা – চাটা
- পাড়া বেড়ায় যে = পাড়াবেড়ানি
- ছা পোষে যে = ছা – পোষা
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে বিভক্তি যুক্ত(কে, রে) ইত্যাদি লোপ পায় যে সমাসে, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
তাহলে কিছু দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত
- পদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন
- বইকে পড়া = বই-পড়া
- চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
- ক্ষণকাল ব্যাপীয়া স্থায়ী(ব্যাপ্তি অর্থে) = ক্ষণস্থায়ী
- পরলোকে গত= পরলোকগত
- পুঁথিতে গত= পুঁথিগত
- চিরদিন ধরিয়া শত্রু = চিরশত্রু
- সাহায্যকে প্রাপ্ত = সাহায্যপ্রাপ্ত
- লোককে অতীত = লোকাতীত
- স্বৰ্গকে প্রাপ্ত = স্বর্গপ্রাপ্ত
- ধর্মকে সংক্রান্ত = ধর্মসংক্রান্ত
- অশ্বকে আরুঢ় = অশ্বারুঢ়
- সংখ্যাকে অতীত = সংখ্যাতীত
- বিস্ময়কে আপন্ন = বিস্ময়াপন্ন
- স্মরণকে অতীত = স্মরণাতীত
- গৃহকে প্রবিষ্ট = গৃহপ্রবিষ্ট
- ক্ষমতাকে প্রাপ্ত = ক্ষমতাপ্রাপ্ত
- শরণকে গত = শরণাগত
- দেশকে আশ্রিত = দেশাশ্রিত
- ভারকে প্রাপ্ত = ভারপ্রাপ্ত
তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা,দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপ পায় যে সমাসে তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
তাহলে কিছু তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- মধু দিয়ে মাখা = মধুমাখা
- বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত = বস্ত্রাচ্ছাদিত
- লাঠি দ্বারা খেলা = লাঠিখেলা
- রক্ত দ্বারা সিক্ত = রক্তসিক্ত
- স্নেহ দ্বারা অন্ধ = স্নেহান্ধ
- ধামা দ্বারা চাপা = ধামাচাপা
- অস্ত্র দ্বারা উপচার = অস্ত্রোপাচার
- জরা দ্বারা জীর্ণ = জরাজীর্ণ
- স্বনাম দ্বারা ধন্য = স্বনামধন্য
- ইন্দ্রিয় দ্বারা = গ্রাহ্য = ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য
- দৃষ্টি দ্বারা হীন = দৃষ্টিহীন
- বিনয় দ্বারা অবনত = বিনয়াবনত
- বাগ দ্বারা দত্তা = বাগদত্তা
- মন দ্বারা গড়া = মনগড়া
- শোক দ্বারা আর্ত = শোকার্ত
- গুণ দ্বারা মুগ্ধ = গুণমুগ্ধ
- তৈল দ্বারা আক্ত = তৈলাক্ত
- শোক দ্বারা আকুল = শোকাকুল
- মধুতে মাখা = মধুমাখা
- বিপদ দ্বারা সঙ্কুল = বিপদসঙ্কুল
- জন, দ্বারা আকীর্ণ = জনাকীর্ণ
- পুষ্প দিয়া অঞ্জলি = পুষ্পাঞ্জলি
- মন দিয়ে গড়া = মনগড়া
- শ্রম দ্বারা লব্ধ = শ্রমলব্ধ
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপ পায় যে সমাসে তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস।
তাহলে কিছু চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- বসতের নিমিত্ত বাড়ি = বসতবাড়ি
- বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগল
- তপের নিমিত্ত বন = তপোবন
- গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি
- গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি,
- আরামের জন্য কেদারা = আরামকেদারা,
- বসতের জন্য বাড়ি = বসতবাড়ি,
- বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা,
- হজ্বের জন্য যাত্রা = হজ্বযাত্রা,
- পাগলের নিমিত্তে গারদ = পাগলাগারদ,
- মরণের নিমিত্তে কাঠি = মরণকাঠি,
- শিশুর জন্য সাহিত্য = শিশুসাহিত্য,
- শয়নের নিমিত্তে কক্ষ = শয়নকক্ষ,
- রান্নার জন্য ঘর = রান্নাঘর,
- ছাত্রের জন্য আবাস = ছাত্রাবাস,
- ছাত্রীর জন্য নিবাস = ছাত্রীনিবাস,
- জীবনের নিমিত্তে কাঠি = জীবনকাঠি,
- ডাকের জন্য মাশুল = ডাকমাল
- বালিকাদের জন্য বিদ্যালয়= বালিকা বিদ্যালয়
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে,থেকে ইত্যাদি) লোপ পায় যে সমাসে তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস।
তাহলে কিছু পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- খাঁচা থেকে ছাড়া = খাঁচাছাড়া
- বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত
- ইতি হতে আদি = ইত্যাদি
- প্রাণের চেয়ে অধিক = প্রাণাধিক
- সত্য থেকে ভ্রষ্ট = সত্যভ্রষ্ট
- প্রাণের চেয়ে প্রিয় = প্রাণপ্রিয়
- জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত
- জেল থেকে খালাস = জেলখালাস
- পণ হতে মুক্তি = পণমুক্তি
- আগা থেকে গোড়া = আগাগোড়া
- স্কুল থেকে পালানো = স্কুলপালানো
- বোটা হতে খসা = বোঁটাখসা
- শাপ থেকে মুক্ত = শাপমুক্ত
- মৃত্যু হতে উত্তীর্ণ = মৃত্যুত্তীর্ণ
- ঋণ হতে মুক্ত = ঋণমুক্ত
- পরাণের চেয়ে প্রিয়= পরাণপ্রিয়
ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ পায় যে সমাসে তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
তাহলে কিছু ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- চায়ের বাগান = চাবাগান
- রাজার পুত্র = রাজপুত্র
- বিশ্ব বিদ্যার আলয় = বিশ্ববিদ্যালয়
- পুষ্পের সে․রভ = পুষ্পসৌরভ
- দিল্লীর রাজা = দিল্লীরাজ
- গজনীর রাজা = গজনীরাজ
- পিতার ধন = পিতৃধন
- মাতার সেবা = মাতৃসেবা
- ভ্রাতার পুত্র = ভ্রাতুষ্পুত্র
- পত্নীর সহ= পত্নীসহ বা সপত্নীক
- কন্যার সহ = কন্যাসহ
- সহোদরের প্রতিম= সহোদরপ্রতিম
- ছাত্রের বৃন্দ = ছাত্রবৃন্দ
- গুণের গ্রাম = গুণগ্রাম
- হস্তির যূথ = হস্তিযূথ
- ফুলের গাছ = ফুলগাছ
- খেয়ার ঘাট = খেয়াঘাট
- চায়ের দোকান = চাদোকান
- সূর্যের আলোক = সূর্যালোক
- পিতার তুল্য = পিতৃতুল্য
- জাতিদের সংঘ = জাতিসংঘ
- যমের আলয় = যমালয়
- নাটকের অভিনয় = নাটকাভিনয়
- মনের রথ = মনোরথ
- দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু
- বাদরের নাচ = বাদরনাচ
- বিড়ালের ছানা = বিড়ালছানা
- নদীর জল = নদীজল
- শিক্ষার মন্দির = শিক্ষামন্দির
- দূতের আবাস = দূতাবাস
- ভাইয়ের পো = ভাইপো
- ঠাকুরের বাড়ি = ঠাকুরবাড়ি
- কবিদের গুরু = কবিগুরু
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়,তে) লোপ পায় যে সমাসে তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস।
তাহলে কিছু ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- রঙ্গে ভরা = রঙ্গভরা
- পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব
- পূর্বে অদৃষ্ট = অদৃষ্টপূর্ব
- গাছে পাকা = গাছপাকা
- অকালে মৃত্যু = অকালমৃত্যু
- দিবায় নিদ্রা = দিবানিদ্রা
- ভোজনে পটু = ভোজনপটু
- দানে বীর = দানবীর
- বস্তাতে পচা = বস্তাপচা
- বনে বাস = বনবাস
- পাপে আসক্ত = পাপাসক্ত
- বাক্সতে বন্দী = বাক্সবন্দী
- তালে কানা = তালকানা,
- মনে মরা = মনমরা
- অকালে পক্ক = অকা
- নামাযে রত = নামাযরত,
- গোলায় ভরা = গোলাভরা
- বাকে পটু = বাকপটু
অলুক তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে কোন প্রকার বিভক্তি লোপ না পেয়েই যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
তাহলে কিছু অলুক তৎপুরুষ সমাস জেনে নেয়া যাক-
- ঘানি তেল = ঘানিতেল,
- ঘি দিয়ে ভাজা = ঘিয়ে ভাজা,
- গোড়ায় গলদ = গোড়ায়গলদ,
- তেলে ভাজা = তেলেভাজা,
- হাতে কাটা = হাতেকাটা,
- হাতের পাঁচ = হাতের পাঁচ
- মামার বাড়ি = মামার বাড়ি
- সাপের পা = সাপের পা
- মনের মানুষ = মনের মানুষ
- কলের গান = কলের গান
- গরুর গাড়ি = গরুর গাড়ি
- গায়ে পড়া = গায়ে পড়া
- কিন্তু, ভ্রাতার পুত্র = ভ্রাতুষ্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)
আরো দেখুন
চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ সমাস- পর্ব ২
চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ সমাস- পর্ব ১