ঢালিউড নামে যাকে চিনি তা বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি।বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’আব্দুল জব্বার খানের পরিচালনায় ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট নির্মানের মাধ্যমে বাংলা সিনেমার কাজ শুরু হয়।পরবর্তীতে আরও ভাল কাজের মাধ্যমে সামনে অগ্রসর হয়।

১০.সত্যের মৃত্যু নেই
”সত্যের মৃত্যু নেই” সিনেমাটি পরিচালনা করেন – ছটকু আহমেদ আর অভিনয়ে- সালমান শাহ, শাবানা, আলমগীর, শাহনাজ, শাহরুখ শাহ, তুষার খান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, শারমিন, রাজিব, মিশা সওদাগর, বেলাল আহমেদ, জালাল আহমেদ, ফকিরা প্রমুখ।সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬।
সিনেমাটির কিছু উল্লেখযোগ্য গান-চিঠি এলো জেলখানাতে, নয়নের কাছে থেকো, সুখের আরেক নাম, এই পথ আমার ঠিকানা।
কাহিনী-সিনেমাটিতে দর্শক সালমানকে ব্যতিক্রমী রোলে দেখতে পায় অর্থাৎ অমর নায়ক সালমান শাহ-কে তার দর্শকেরা কখনো ফাঁসির আসামী হয়ে পর্দায় দেখেনি ।এই সিনেমায় এটিই দেখানো হয়েছে।এখানে এক সন্তানের করুন ফরিয়াদ তুলে ধরা হয়েছিল-”আমাকে একটু আদর করো মা, আমাকে একটু আদর করো” এ ছবি মুক্তির কিছুদিন আগেই না ফেরার দেশে সে চলে গিয়েছিল।সিনেমাটির প্রাণ ছিল মূলত ফ্যামিলি ড্রামাই ।বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ কোটির বেশি অর্থাৎ ১১ কোটি আয় করা সিনেমা ৩টির মাঝে এটি একটি।

৯.নবাব
নবাব চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন জয়দীপ মুখার্জী আর প্রযোজনা করেছেন আব্দুল আজিজ ও হিমাংশু ধানুকা।চলচ্চিত্রটি ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার মারপিটধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র।যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন পেলে ভট্টাচার্য ও জয়দীপ মুখার্জী।
অভিনয়ে-নাম ভূমিকায় শাকিব খান এবং শুভশ্রী গাঙ্গুলী, রজতাভ দত্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী, অমিত হাসান, অপরাজিতা আঢ্য, ও খরাজ মুখোপাধ্যায়।
পূর্ব থেকে শাকিব থানের জনপ্রিয়তা থাকলেও এ সিনেমায় তার অভিনয় ও মারপিঠের জন্য জনপ্রিয়তা আরও অনেকগুন বেড়ে যায়।শাকিব খানের জনপ্রিয়তা থাকলেও এই সিনেমায় তার অভিনয় ও মারপিটের জন্য জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।নবাব সিনেমাটি ‘বাজি’’সারফারোশ’ও’বাদশাহ’ সিনেমার সংমিশ্রণে তৈরি।এ কারণে দর্শক সমালোচনায়েএকটি কথা উঠে আসে-“জোড়াতালি কাহিনির জমজমাট ছবি”।ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশে মুক্তি পায় ২০১৭ সালে ২৬ জুন এবং ভারতে মুক্তি পায় ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই ।১১ কোটি আয় করা সেনেমাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি।

৮.আম্মাজান
আম্মাজান চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন কাজী হায়াৎ আর প্রযোজনা ও কাহিনী লিখেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। চলচ্চিত্রটি ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায়।এটি বাংলাদেশী অপরাধধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র।
অভিনয়ে- নাম ভূমিকায় (আম্মাজান) অভিনয় করেছেন শবনম এবং মান্না অভিনয় করেছেন তার পুত্রের ভূমিকায় । এছাড়াও মৌসুমী, আমিন খান, ডিপজল, মিজু আহমেদ প্রমুখ অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
বাংলাদেশে আম্মাজান চলচ্চিত্রটি ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায়। ১৯৯৯ সালের এটি অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র।১১ কোটি আয় করা সেনেমাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিও একটি।
এ সিনেমায় মোট পাঁচটি গান থাকলেও “আম্মাজান” এবং “তোমার আমার প্রেম” গানটি দর্শক জনপ্রিয়তা পায় অনেক।
এই চলচ্চিত্রটি মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে- ২৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে, কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে , বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ,মান্নার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার।

৭.পরাণ
তালিকার সাত নম্বরে আছে পরাণ। পরাণ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন রায়হান রাফি আর প্রযোজনা করেন মোঃ তামজিদ উল আলম তারই ব্যানার লাইভ টেকনোলজিসের অধীনে। এটি বাংলাদেশী বাংলা ভাষার প্রণয়ধর্মী নাট্য এবং সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। ২০২২ সালে মুক্তি পায় এই সিনেমা।
প্রধান ভুমিকায় অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মীম, শরিফুল রাজ ও ইয়াশ রোহান। এছড়াও আরও আছেন শিল্পী সরকার অপু, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকি, লুৎফর রহমান জর্জ, মিলি বাশাসহ অনেকে।
পড়াশুনায় অমনোযোগী অনন্যা নামের এক মেয়ে পরীক্ষায় পাশের জন্য এলাকার বখাটে ছেলে রোমানের সাহায্য নেয়।পরবর্তীতে দু’জনের মাঝে সম্পর্ক তৈরি হয় এবং বেশকিছুদিন পর তার জীবনে ঘটে অপ্রত্যাশিত, হৃদয় বিদারক ঘটনা কিছু ঘটনা।এদের এই জঠিল প্রেমের ঘটনাই সিনেমায় ফুটে উঠেছে।
সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবার পর বেশ সারা ফেলে সকল শ্রেণীর দর্শকদের মাঝে।
এই সিনেমাটি বাংলাদেশের পটভূমিকায় ১২ কোটি আয় করে।

৬.পাসওয়ার্ড
পাসওয়ার্ড একটি বাংলাদেশী মারপিট-অপরাধধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি ২০১৯ সালে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি মালেক আফসারী পরিচালনা করেছেন এবং শাকিব খান ও মোহাম্মদ ইকবাল এসকে ফিল্মসের ব্যানারে যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন । শাকিব খানের প্রযোজনায় এটি দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। সুইস ব্যাংকের একাউন্টের পাসওয়ার্ড নিয়ে মূলত চলচ্চিত্রটি।আলাউদ্দীন সরকার মূলত একাউন্টটির প্রকৃত মালিক, যিনি রুদ্রকে মৃত্যুর পূর্বে বাংলাদেশের রিহ্যাবিলিটেশন ফান্ডে টাকা জমা দেয়ার জন্য নিজের ব্যাংক একাউন্টের ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড দিয়ে যান।
অভিনয়ে-প্রধান চরিত্রে শাকিব খান, শবনম বুবলি ও ইমন এবং অন্যান্য চরিত্রে মিশা সওদাগর, অমিত হাসান, ডন ও সাংকো পাঞ্জা সহ আরও অনেকে।মূখ্য ভূমিকায় নতুন মুখ তনামি হককে দেখা যায়।
চলচ্চিত্রটি পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে।
এই সিনেমাটি বাংলাদেশের পটভূমিকায় ১২ কোটি আয় করেন।

৫. প্রিয়া আমার প্রিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া একটি বাংলাদেশী কৌতুক মারপিট প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এবং মনির হোসেন প্রযোজিত ও আশা প্রোডাকশনের ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত।
অভিনয়ে- প্রধান চরিত্রে শাকিব খান ও সাহারা। এছাড়াও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, প্রবীর মিত্র, আফজাল শরীফ ও রেহানা জলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।
এই চলচ্চিত্রটি একাধিক ভাষার নির্মিত হয়।
কন্নড় ভাষার আপ্পু (২০০২ সালে), তেলুগু ভাষায় ইডিয়ট (২০০২), তামিল ভাষায় দম (২০০৩) বাংলা ভাষায় হিরো (২০০৬) নামে পুনঃনির্মিত হয়। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসাবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পান শাকিব খান।
বাংলাদেশের পটভূমিকায় ১৫ কোটি আয় করেন এই সিনেমাটি।

৪.হাওয়া
হাওয়া চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত। এই চলচ্চিত্রটি বাংলা ভাষার রহস্য–নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের অধীনে প্রযোজিত এবং ফেসকার্ড প্রোডাকশনের অধীনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি ।
একালের রূপকথা নির্ভর চলচ্চিত্রটির গল্প মূলত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলারে আটকে পড়া আটজন মাঝি-মাল্লা এবং রহস্যময় এক বেদেনীকে ঘিরে প্রবাহমান হয়েছে।
অভিনয়ে- চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরীফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মণ্ডল ও রিজভী রিজু।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালের ২৯ জুলাই মুক্তি পায়। ৪৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ২টি বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক (সুমন)-সহ পাঁচটি পুরস্কার

৩.স্বপ্নের ঠিকানা
১৯৯৫ সালের ১১ মে ঢাকার বাইরে স্বপ্নের ঠিকানা চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।দর্শকদের ব্যাপক চাহিদায় পরবর্তীতে ঢাকা সহ সারাদেশে মুক্তি পায় এবং প্রচন্ড আলোড়ন তোলে।ঢালিউডের চলচ্চিত্রে ২য় সর্বাধিক অর্থাৎ ১৯ কোটি টাকা আয়ের করে।
অভিনয়ে- চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেন সালমান শাহ,শাবনূর,সোনিয়া,রাজীব,প্রবীর মিত্র,আবুল হায়াত ,দিলদার ,ডলি জহুর ,ব্ল্যাক আনোয়ার,সাঈদ আক্তার।

২.বেদের মেয়ে জোস্না
তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত বেদের মেয়ে জোস্না একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র।এটি ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায়।এটি একটি অন্যতম আয়ের সিনেমাগুলোর মাঝে এটি অন্যতম অর্থাৎ ২০ কোটি টাকা আয় করে।এই চলচ্চিত্রটি সেই সময়ে ১এক নাম্বারে থাকলেও বর্তমানে এটি দুই নাম্বারে এসেছে।
অভিনয়ে- চলচ্চিত্রটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। চলচ্চিত্রটির সফলতার কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়।সেখানেও মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং তার বিপরীতে চিরঞ্জীত।এছাড়াও অভিনয় করেন মিঠুন,ফারজানা ববি,সাইফুদ্দিন,নাসির খান,প্রবীন মিত্র সহ আরও অনেকে।

১. প্রিয়তমা
প্রিয়তমা চলচ্চিত্রটি একটি বাংলাদেশী রোমান্টিক-এ্যাকশন চলচ্চিত্রিএই চলচ্চিত্রটি ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত। হিমেল আশরায় পরিচালনায় এটি দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এবং আরশাদ আদনান ভার্সেটাইল মিডিয়ার অধীনে প্রযোজনা করেছেন ।এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সব্বোর্চ আয়রে অর্থাৎ ব্যবসাসফল সিনেমা।এই চলচ্চিত্রটিতে আয় হয় ৪১.২৩ কোটি টাকা।
অভিনয়ে- মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, ইধিকা পাল ও শহীদুজ্জামান সেলিম। এছাড়াও এলিনা শাম্মী, ডন, লুৎফুর রহমান খান সীমান্ত ও লুৎফর রহমান জর্জ অন্যান্য চরিত্রে আছেন।