Nobel Prize বা নোবেল পুরস্কার হলো একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। যাকে সুয়েডীয় ভাষায় Nobelpriset বলে। এটি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত হয়ে ঐ বছর থেকে চালু করা হয়। সারা বিশ্বের সফল ও অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন বা মানবকল্যাণমূলক তুলনারহিত কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এই পুরস্কারটি মোট ছয়টি বিষয়ে প্রদান করা হয়। যথা-
- পদার্থবিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- রসায়ন
- চিকিৎসা শাস্ত্র
- সাহিত্য ও
- শান্তি।
নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময়
যে প্রতিষ্ঠানগুলো পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত তারা লরিয়েটদের নাম ঘোষণা করেন ঠিক অক্টোবর মাসে। আর ১০ ডিসেম্বরে অর্থাৎ আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক প্রদান করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান: সাধারণত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে।
সাহিত্য: সাধারণত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
শান্তি: সাধারণত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে।
অর্থনীতিতে স্মারক পুরস্কার: অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে সাধারণত।
নোবেল পুরস্কার প্রদানের ধাপ
চারটি ধাপে নোবেল পুরস্কার দেয়ার কাজ চলে। যথা-
- মনোনয়ন
- মূল্যায়ন
- ঘোষণা ও
- পুরস্কার প্রদান।
১. মনোনয়ন
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে পারেন।
২. মূল্যায়ন
প্রতিটি শাখার জন্য নোবেল কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির কাজ হলো মনোনয়নগুলো পর্যালোচনা করা এবং পুরস্কারের জন্য বিজয়ী নির্বাচন করা।
৩. ঘোষণা
অক্টোবর মাসেই নোবেল পুরস্কারের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
৪. পুরস্কার প্রদান
নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে। আলফ্রেড নোবেল-এর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোম, সুইডেনে একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে। তবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করেন নরওয়ে নোবেল কমিটি।
২০২৩ সালে যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন
চিকিৎসাবিজ্ঞান
চিকিৎসাশাস্ত্রে এ বছর নোবেল পেয়েছেন যৌথভাবে ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রু উইসম্যান।
যে কারণে এই পুরস্কার পান:
তারা কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তন সংক্রান্ত এমআরএনএ টিকা আবিষ্কারের করার জন্য এই পুরস্কারটি পান। সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার (২ অক্টোবর) চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করে।
বিজয়ীদের সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য:
মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে এমআরএনএ কীভাবে যোগাযোগ করে সে সম্পর্কে এতদিনের ধারণা মৌলিকভাবে পরিবর্তন হয়েছে তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে। আধুনিক সময়ে মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি হুমকির ভ্যাকসিন বিকাশে তাদের অবদান অভূতপূর্ব।
বর্তমানে কর্মরত আছেন:
ক্যাটালিন কারিকোর ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির জোলনকে জন্মগ্রহণ নেন। আর ড্রু উইসম্যান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটনে। দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পেয়েছেন যৌথভাবে পিয়েরে অ্যাগোস্টনি, ফিরেন্স ক্রাসজ ও অ্যান লরিয়েল।
যে কারণে এই পুরস্কার পান:
সবচেয়ে কম সময়ে আলোকে ধারণ করার ব্যাপারে গবেষণার জন্য তারা এই পুরস্কারটি পান। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স পদার্থবিজ্ঞানে বিজয়ী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করে।
বিজয়ীদের সম্পর্কে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমির মন্তব্য:
মানবতাকে তিনজনের গবেষণা, পরমাণু ও অণুর ভিতরে ইলেকট্রনের জগৎ অন্বেষণের জন্য নতুন সরঞ্জাম তৈরি করে দিয়েছে।
বর্তমানে কর্মরত আছেন:
পিয়েরে অ্যাগোস্টনি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, ফিরেন্স ক্রাসজ জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব কোয়ান্টাম অপটিকসে এবং অ্যান লরিয়েল সুইডেনের লন্ড ইউনিভার্সিটিতে।
রসায়ন
রসায়নে এ বছর নোবেল পেয়েছেন যৌথভাবে মুঙ্গি জি বাউইন্ডি, লুইস ই ব্রাস এবং আলেক্সি ই.ইকিমভ।
যে কারণে এই পুরস্কার পান:
কোয়ান্টাম ডটের আবিষ্কার ও উন্নয়ন এবং ন্যানোপার্টিকলের আকার ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে তাদের অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কারটি পান। বুধবার (৪ অক্টোবর) রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স রসায়নে বিজয়ী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করে।
বিজয়ীদের সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য:
টেলিভিশন এবং এলইডি লাইট থেকে তাদের আলো ছড়িয়ে দেয় এবং অন্যান্য অনেক জিনিসের মধ্যে টিউমার টিস্যু অপসারণ করার সময় ন্যানোটেকনোলজির এই ক্ষুদ্রতম উপাদানগুলি সার্জনদেরও নির্দেশনা দিতে সাহায্য করতে পারে।
বর্তমানে কর্মরত আছেন:
মুঙ্গি জি বাউইন্ডি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজিতে, লুইস ই ব্রাস কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে এবং আলেক্সি ই.ইকিমভ ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজির ইনকরপোরেশনে।
সাহিত্য
সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়োন ফসে।
যে কারণে এই পুরস্কার পান:
ইয়োন ফসে নরওয়েতে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাকে লেখায় তুলে ধরেছেন শিল্পিত সুষমায়। শুধু তাই নয়, অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া বহু কথা তিনি তার লেখায় তুলে এনেছেন। এসব কারণে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।
বিজয়ী সম্পর্কে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমির মন্তব্য:
ইয়োন ফসে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হওয়া নাট্যকারদের মাঝে অন্যতম। তিনি মানুষের উদ্বেগ ও দ্বিধাকে নিজ মুনশিয়ানায় উপস্থাপন করে প্রশংসিত।
বিজয়ী সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য:
নির্দিষ্ট কোনো কোনো লেখার জন্য তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। বরং বিপুল সাহিত্যকর্ম রচনার জন্যই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তার রচনা এত বিশাল যে, যার তালিকা করা অসম্ভব কঠিন।
বিজয়ী সম্পর্কে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়াস ওলসন-এর মন্তব্য:
‘তার লেখার বিশেষত্ব হচ্ছে মানব–ঘনিষ্ঠতা। সেসব আপনার গভীরতর অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করে যাবে। উদ্বেগ, নিরাপত্তাহীনতা, জীবনের অর্থ ও মৃত্যু-এ রকম নানা বিষয়, মানুষকে আসলে যার প্রতিটির মুখোমুখি হতে হয়।’
ইয়োন ফসের রচনা:
তিনি নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ বই ছাড়াও অনুবাদের বইও রচনা করেছেন। তার এই লেখাগুলো বিশ্বজুড়ে নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নাটকে তিনি ৪০টির মতো লিখেছেন।
তবে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম উপন্যাস ‘বোটহাউস’ (১৯৮৯) এবং ‘মেলাংকলি’ ১ ও ২ (১৯৯৫–১৯৯৬) হলেও সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৩ সালে উপন্যাস ‘রেড, ব্ল্যাক’ এর মাধ্যমে। পরবর্তী সাহিত্যকর্মের সুর বেঁধে দিয়েছিলো তার এই উপন্যাসটিই।
শান্তি
শান্তিতে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইরানের নার্গিস মোহাম্মদী। তিনি একজন মানবাধিকারকর্মী।
যে কারণে এই পুরস্কার পান:
ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং মানবাধিকার ও সবার জন্য স্বাধীনতার পক্ষে প্রচেষ্টার জন্যই তিনি এই পুরস্কারটি পান। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নোবেল কমিটি শান্তিতে বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।
বিজয়ী সম্পর্কে নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটের মন্তব্য:
নার্গিস মোহাম্মদী একাধারে নারী, মানবাধিকারকর্মী ও স্বাধীনতা যোদ্ধা। এ কাজের জন্য তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ইরানের শাসক দ্বারা ১৩ বার গ্রেপ্তার ও ৫বার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। শাস্তি হিসেবে ১৫৪টি বেত্রাঘাত ও ৩১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। যে কারণে এখনও তিনি কারাগারে।
’এনজিও ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টার’ এর উপপ্রধান হিসেবে কাজ করছেন নার্গিস মোহাম্মদী। এই এনজিওটি শান্তিতে নোবেলজয়ী আরেক ইরানি নারী শিরিন এবাদির নেতৃত্বাধীন।
অর্থনীতি
অর্থনীতিতে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ক্লদিয়া গোল্ডিন।
রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস সোমবার ( ৯ অক্টোবর ) অর্থনীতিতে বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।
বিজয়ী সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য:
ক্লদিয়া গোল্ডিন প্রথম ব্যাপক বিবরণ প্রদান করেছেন শতাব্দীজুড়ে নারীদের উপার্জন এবং শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের ব্যাপারে। তার গবেষণা পরিবর্তনের কারণ, সেইসাথে বিদ্যমান লিঙ্গ ব্যবধানের মূল উৎস প্রকাশ করে।
বর্তমানে কর্মরত আছেন:
ক্লদিয়া গোল্ডিন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে আছেন।
আরো দেখুন – ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য সেরা ১০ টি স্কিল