fbpx
Wednesday, December 11, 2024
spot_imgspot_img
HomeInfoHenna: কোন মেহেদি সবচেয়ে নিরাপদ?

Henna: কোন মেহেদি সবচেয়ে নিরাপদ?

মেহেদি

‘মেহেদি’ শব্দটা শুনলেই কেমন যেন উৎসব উৎসব মনে হয়, তাই না? 

আজ আমরা এই মেহেদি সম্পর্কে জানবো। এর ইতিহাস,অতীতে ও বর্তমান সময়ে 

মেহেদির ব্যবহার ও প্রচলনের ইতিহাস-

যদি আমরা মেহেদির ইতিহাস খুঁজতে যাই, তাহলে আজ থেকে অনেক অনেক বছর পিছনে ফিরতে যেতে হবে। নব্যপ্রস্তর যুগে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলে মরুবাসীরা প্রচণ্ড গরম থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পায়ে মেহেদি পেস্ট লাগিয়ে রাখতো। এতে গোটা শরীর ঠাণ্ডা থাকতো। বিশেষ করে যারা যোদ্ধা ছিলেন, তাদের ভেতরে এটা লক্ষ্য করা যেত।

২১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলীয়ান ও সুমেরীয় সভ্যতার শুরুতেই মেহেদি ব্যবহারের ইতিহাস লক্ষ্যণীয়। তাছাড়া, দক্ষিণ চীনে প্রায় ৩ হাজার বছর ধরে প্রাচীন দেবী সংস্কৃতির প্রেমমূলক ধর্মানুষ্ঠানেও মেহেদি যুক্ত ছিলো। 

প্রাচীন মিশরের রাণী নেফারতিতি ও রানী ক্লিওপেট্রা মেহেদি নিয়মিত ব্যবহার করতেন। তাছাড়া এ সময়ে মহিলাগণের হাত-পা রাঙানোর পাশাপাশি পুরুষেরাও দাড়ি ও ঘোড়ার লেজ রাঙাতে মেহেদি ব্যবহার করতেন। মিসরের পিরামিডে ফারাও সম্রাটদের মমি সংরক্ষণে মেহেদি ব্যবহার করা হতো। ভারতের অজন্তা গুহার অঙ্গসজ্জ্বায় মেহেদির ব্যবহার দৃশ্যমান। মুঘল আমলে প্রাকৃতিক প্রসাধনী হিসেবে মেহেদির সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও রাজা-রাণীগণ মূলত উন্নতির নিদর্শণ হিসাবে দেহসজ্জায় মেহদীর ব্যবহার করতেন।

মিশরের রাজা রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে মোগল সম্রাট শাহজাহান পত্নি মমতাজকে মেহেদি এবং মেহেদি চারা পাঠিয়েছিলেন।

অবশ্য, অনেক আগে থেকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের দাঁড়িতে মেহেদি ব্যবহার করতে দেখা গেছে, ধর্মীয় দিক হতে মেহেদিকে গুরুত্ব দিয়ে।

মেহেদির বাহারি নাম-

মেহেদি কিন্তু বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যা হয়তো আমরা সকলে জানিনা। যেমন ধরেন, হিন্দি ও উর্দুতে একে মেহেন্দি, ইংরেজীতে হেনা (Henna), মধ্য-প্রাচ্যে হেন্না, মধ্য-এশিয়ায় ‘আল-খান্না’ নামে পরিচিত।  আর এ শব্দগুলো আরবী শব্দ আল-হিন্না (Al-Hinna) থেকে এসেছে। এগুলো ছাড়াও অবশ্য মেহেদির কিছু ওষুধী নাম রয়েছে- ইউনানী নাম হেনা, আয়ুর্বেদিক নাম মদয়ন্তিকা, বোটানিক্যাল নাম লসোনিয়া ইরামিস (Lawsonia Inermis)। 

বিভিন্ন দেশে মেহেদির ব্যবহার-

বাংলাদেশ ছাড়া আফ্রিকার অনেক জায়গা আছে যেখানে আরোগ্য মুক্তি উপলক্ষে মেহেদি ব্যবহার করা হয়। আর আরব্য সংস্কৃতিতে তো বিয়েতে ‘মেহেদি সন্ধ্যা’ নামে একটি জনপ্রিয় প্রথা প্রচলিত রয়েছে। দিনে দিনে এই অনুষ্ঠান  এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । তাছাড়া চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মেহেদিকে আয়ুর্বেদীয়, ইউনানী ও বিভিন্ন প্রকার অর্গানিক চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে মেহেদির ব্যবহার-

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মেহেদিকে পবিত্র মনে করে এর প্রচলন হলেও বর্তমানে সময়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।

বিশেষ করে,বিয়ে, ঈদ-পূজা, বৈশাখ ও নববর্ষের অনুষ্ঠান আসলেই বোঝা যায়, মেহেদি  কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আবহমানকাল থেকে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন-প্রাক বিবাহ, বিবাহ, গর্ভাবস্থার আটমাস, সন্তান জন্মের ৪০ দিন, সন্তানের নামকরণে মেহেদির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যেতো। বাংলাদেশে তো বিয়ের অনুষ্ঠান, মেহেদি  ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ।

প্রাকৃতিক রং হিসাবে মেহেদির ব্যবহার-

উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় মেহেদির আদি প্রচলন হলেও প্রাকৃতিক রং হিসাবে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মেহেদি অতি পরিচিত। হাত ও পায়ের ডিজাইনে, উলকি অঙ্কনে এবং চুলে রঞ্জক পদার্থ হিসাবে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মেহেদি প্রায় সব এলাকায় কম বেশি পাওয়া যায়।

মেহেদির বিশেষ ব্যবহার-

কন্ডিশনার হিসাবেও মেহেদির রয়েছে বিশেষ ব্যবহার। তাছাড়া, হেয়ার টনিক, হেয়ার কন্ডিশনার ও হেয়ার ক্লিণজার বা শ্যাম্পু হিসাবেও ব্যবহার হয়। মেহেদির ফুলের তেল ব্যবহৃত হয় পারফিউম হিসাবে। আর পাতা পেস্ট বা পাউডার দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। তবে বেশি উপকার পেতে পাওডারের সাথে লেবুর রস, চা বা ইউক্যালিপটাস পাতা মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 মেহেদির গুণাগুণ

মেহেদির গাছের পাতা ছাড়াও এর অন্যান্য অংশও যেমন-ছাল, পাতা, বীজ ও ফুল নানাভাবে ব্যবহার করা হয়।

এর বীজ হতে উচ্চ-সান্দ্রতার তৈল পাওয়া যায়। এই তেলে রয়েছে বিহেনিক, অ্যারাসিডিক, স্টিয়ারিক, পালমেটিক, ওলিক ও লিনোলিক এসিড। চর্ম -মলম তৈরিতে হেনার পাতা ও ফুলের তেল খুবই কার্যকর। এ মলম চামড়ায় ক্ষত, পোড়া ও চামড়ার ফ্যাকাসে হলুদ দাগ দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া আমাশয়, এর বীজের পাওডারের সাথে ঘি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

তাছাড়া, হেনা পেস্ট স্কেবিস ও নখের ফাটার রোধে বেশ কার্যকর। পায়ের পাতার জ্বালা-পোড়ার ক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে স্বস্তি ফিরে আনতে এটি অনেক উপকারি। তাছাড়া চুলের যত্নে,বিশেষ করে টাক পড়া রোধে কাজ করে।

এর বাকল লিভারের বিভিন্ন জটিলতা রোধে সাহায্য করে। রৌদ্রজনিত কারণে মাথা ব্যাথা হলে মেহেদির ফুলের পেস্টের সাথে ভিনেগার মিশিয়ে কপালে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।

তাছাড়াও, যদি হাড়ের কোন জোড়ায় ব্যাথা হয় বা ফোলে যায়, তাহলে এর পাতার পেস্ট লাগালে উপকার মেলে। গলা ব্যাথা হলেও এর পাতা দিয়ে গরম করা পানি কুলকুচা করা যায়, তবে ব্যাথা উপশম হয়।

বাণিজ্যিক আকারে মেহেদির চাষ-

মেহেদির এতো এতো গুণের কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিক আকারে চাষের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। আর এরই ভিত্তিতে রাজধানীর অদূরে সাভারের সলমাসি গ্রামে মেহেদির চাষ শুরু হয়েছে। যে কারণে গ্রামটি এখন লোকমুখে ‘মেহেদি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। এ গ্রামের প্রায় অর্ধশত কৃষক মেহেদি চাষ করেই তাদের সংসার পরিচালনা করছে।

শীতে মেহেদি পাতার উৎপাদন কম হলেওে বছরে অন্তত ৫ বার মেহেদি পাতা বিক্রি করা যায়। আর পাইকাররা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে সার-কীটনাশকের দাম বাড়ায় মেহেদি চাষিরা একটু হতাশাগ্রস্থ। তাছাড়া, হাউজিং, বাড়িঘর হওয়ায়, জমি কমে আসায় মেহেদি চাষ এখন  দিন দিন কমে আসছে।

মেহেদি ব্যবহারে কিছু সতর্কতা-

এখন বাজারে টিউব, কোণ বিভিন্ন আকৃতির মেহেদি পাওয়া যায়। ঝামেলা ছাড়াই অল্প সময়ে ভাল রঙ্গের জন্য এগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর মাঝে আসল নকল বিচার করে কেনা অনেকটা কষ্টকর। মেহেদি কেনার সময়ে যদি যাচাই-বাছাই করে কেনা যায়, তাহলে যেমন ভালো রং আসবে, তেমনি ত্বকেরও কোনো ক্ষতি হবেনা।

অবশ্যই কেনার আগে ​​​​​​​​​​​মেহেদির মোড়কে লেখা উপাদান ও ব্যবহারবিধি পড়ে নেবেন। বিশেষভাবে, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে, মেহেদি কিনবেন। আর ‘ইনস্ট্যান্ট কালার’ দেয় এমন মেহেদি না কেনাই ভাল। কেননা, এগুলোতে কেমিক্যালের পরিমাণ এতো বেশি থাকে যে, ত্বকে এলার্জি, র‍্যাশ, চুলকানির মতো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আপনার ত্বকের জন্য মানানসই কি না? এটা যাচাই করার জন্য মেহেদি ব্যবহারের আগে, অল্প পরিমাণ কানের পেছনে লাগিয়ে দেখবেন। যদি কোনরকম চুলকানি হয়, তবে এই মেহেদি না লাগানোই ভাল। তাছাড়া, ফ্রিজে রাখা মেহেদি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করবেন না। আর শিশুদের জন্য বাজারের কেনা মেহেদি না দেওয়াই ভালো।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Elliana Murray on ONLINE SHOPPING
Discover phone number owner on Fake app চেনার উপায়