গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যেন একটি সাধারণ সমস্যা। যার জন্য কোন ডাক্তারের প্রয়োজনই হয় না, এটাই মনে করেন মানুষজন। আর পেট ব্যথা মানেই তো গ্যাস্ট্রিক, এমনি ধারণা সবার। তাইতো ওষুধ চলে বিনা পরামর্শে দিনের পর দিন। এক্ষেত্রে সবাই ডাক্তার।
কিন্তু কখনোও কি ভেবে দেখেছেন, এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর?
ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, লানসোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল এ জাতীয় বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল তো রয়েছে, আবার কেউ কেউ সিরাপও পান করে থাকেন ।
সাময়িকভাবে এসব ওষুধ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে পারে এবং তাৎক্ষণিক কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায় না বলে এ ওষুধের প্রচলন দিনে দিনে বাড়ছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিলেও অনেকে বুঝতে পারেনা সমস্যার কারণ কি?
এবার আমরা জানবো, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে কি কি পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়া হতে পারে-
কিডনিজনিত রোগ:
ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস হলো কিডনির এলাকার প্রদাহ। যা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার ফলে হতে পারে। এটি রেনাল ইন্টারস্টিটিয়াম বা নেফ্রাইটিস নামেও পরিচিত। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ১৮ মাসের বেশি যদি গ্রহণ করা হয় তবে এর সম্ভবনা থেকে যায়। যার ফলস্বরূপ, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, বমি ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ এ ধরনের ঝুঁকি রয়ে যায়।
হাড় ক্ষয়:
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার শুরুতে অ্যাসিড কমতে থাকলেও পরবর্তীতে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হতে থাকে। এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যদি দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিন টানা গ্যাস্ট্রিকের ক্যাপসুল খাওয়া হয়, তখন অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ৪১ শতাংশ পর্যন্ত শোষণ কমে যায়। ফলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একসময় হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। অবশ্যই এসময় পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট বা ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
নিউমোনিয়া:
দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশে বেশ পরিবর্তন আসে। এতে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার অনেকটা বেড়ে যায়। কেননা,এসময় এই ব্যাকটেরিয়ার জন্য বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এটি এক সময় পাকস্থলী থেকে ফুসফুসে পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে। ফলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে থাকে।
কোষ স্ফীত:
দীর্ঘদিন ধরে এ ওষুধ গ্রহণে গ্যাস্ট্রিন নামক একটি উৎসেচকের বা জৈব অনুঘটকের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যদি এসময় ওষুধ খাওয়া বন্ধ করেন, তখন কিন্তু আবার অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এই গ্যাস্ট্রিন নামক উৎসেচকের প্রভাবে একসময় কোষ স্ফীত হতে থাকে। ধীরে ধীরে সেটি ক্যানসারেও পরিণত হতে পারে।
পেটের সমস্যা:
পেটের সমস্যা মানেই অনেকে ধরে নেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। তাই এ ধরনের সমস্যায় অনেকে অ্যান্টাসিড-জাতীয় বড়ি বা সিরাপ খেয়ে থাকেন। এই অ্যান্টাসিডে থাকা বিভিন্ন উপাদান ভেদে তৈরি হতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া মত সমস্যাও হতে পারে।
মাংসে কামড়ানো:
এ ওষুধ গ্রহণে রক্তে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ দিনে দিনে কমতে শুরু করে। ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরের মাংসে কামড়ানোর মত ব্যথা, দুর্বলতা, টাটানি, খিঁচুনি, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও আমাদের শরীরে ভিটামিন বি-১২-এ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যার ফলে রক্তশূন্যতা, স্নায়ুবৈকল্য মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য এ সমস্যা আরও বেশি হতে পারে।
সতর্কতা:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কখনো খাওয়া ঠিক না। চিকিৎসক অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, চিকিৎসক কত দিনের জন্য দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পর ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করাই ভাল।
করণীয়:
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এড়াতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে- অতিরিক্ত তেল, মশলাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা, ধূমপানের পরিহার করা, খাবার গ্রহণের সাথে সাথে না শোয়া।
এছাড়াও ইসবগুলের ভুসি, চিয়া সীড, তোকমা এ জাতীয় প্রাকৃতিক উপাদান গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বিকল্প হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। কেননা, এগুলো অ্যাসিডের সমস্যা নিরাময়ে সহায়তা করার পাশাপাশি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।