খতিয়ান কি
খতিয়ান হলো সরকারের খাজনা আদায়ের মাধ্যম। কার কাছে কতটুকু সম্পত্তি রয়েছে, ভূমির ধরণ বা প্রকৃতি কেমন, কার কাছে কতটুকু খাজনা পাবে তার সবকিছুই সরকার খতিয়ান দেখে জেনে নেয়। খতিয়ান দুই ধরনের হয়। যথা-
ক) রেকর্ডিং বা জরিপ খতিয়ান
খ) নামজারি খতিয়ান।
১. রেকর্ডিং ও জরিপ খতিয়ানের প্রকারভেদ- CS, SA, RS, BS
CS খতিয়ান
ভারত উপমহাদেশের সর্বপ্রথম জরিপ খতিয়ান হলো CS খতিয়ান। ১৮৮৯- ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এই জরিপটি হয়েছে করা হয়েছিল।
CS খতিয়ান চেনার উপায়
এই খতিয়ানে দুটি পাঠ বা বিবরণী রয়েছে। উপরের পাঠটিতে সেই সময়ে জমিদার বা মালিকানার বিবরণ থাকবে আর নিচে প্রজা বা দখলদারদের বিবরণ থাকবে। তাছাড়া দুই পৃষ্ঠা মিলে CS খতিয়ান হয়ে থাকে। এবং আন্ডারলাইনগুলো লম্বালম্বিভাবে থাকবে। তাছাড়া এই খতিয়ানের উপরের অংশে পরগনা কথাটি লেখা থাকবে। এই খতিয়ান ৪০-এর রেকর্ড নামেও পরিচিত।
SA খতিয়ান
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানি সরকার ক্ষমতায় আসলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির হয়ে যায়। পরে ১৯৫৬ সাল হতে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সরকার SA জরিপটি করে। এটিকে অনেক জায়গায় ৬২-এর রেকর্ড নামেও পরিচিত।
SA খতিয়ান চেনার উপায়
SA খতিয়ানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খতিয়ানের বামপাশের একদম উপরে সাবেক এবং নিচে হাল লেখা থাকবে। সাবেক বরাবর ডানপাশে CS খতিয়ানের রেফারেন্স এবং হাল বরাবর ডানপাশে SA খতিয়ানের নাম্বার থাকবে। তাছাড়া SA খতিয়ান সবসময় এক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে।
RS খতিয়ান
এটি হলো বাংলাদেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খতিয়ান। কেননা, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই সরকার এই খতিয়ান তৈরি করেন। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এ খতিয়ান কার্যকর ছিল।
RS খতিয়ান চেনার উপায়
RS খতিয়ান এখন অনেক জায়গায় প্রিন্টেট হয়। আর যদি প্রিন্টেট হয়, তাহলে উপরে স্পষ্ট করে RS খতিয়ান লেখা থাকবে। এটিও CS খতিয়ানের মত দুই পৃষ্ঠা মিলে হবে এবং আন্ডারলাইনগুলো লম্বালম্বিভাবে থাকবে। তবে এই খতিয়ান চেনার এর একটি উপায় হলো ডানপাশে উপরে রেসার্ভে নং দিয়ে একটা নাম্বার থাকবে।
BS খতিয়ান
এই খতিয়ান চেনা খুবই সহজ। এটিকে সিটি জরিপ খতিয়ানও বলা হয়। তবে ঢাকার বাহিরে BS খতিয়ান নামে পরিচিত। এটি ১৯৯৯/২০০০ সাল থেকে বর্তমান সাল পর্যন্ত চালু রয়েছে।
BS খতিয়ান চেনার উপায়
এই খতিয়ান অবশ্যই প্রিন্টেট হবে। এ খতিয়ানে যত লেখা থাকবে সবই প্রিন্টেট হবে। এবং উপরে স্পষ্ট সীল দিয়ে লেথা থাকবে ঢাকা সিটি জরিপ লেখা থাকবে। ঢাকার বাহিরে হলে BS খতিয়ান লেখা থাকবে। অনেকে আবার এটিকে BRS বলে থাকেন। এটি নাকি RS খতিয়ানের পরে হয়েছিল। তবে মনে রাখতে হবে এটি অবশ্যই প্রিন্টেট এবং সব লেখাই প্রিন্টেট হবে। আর ঢাকার ভিতরে হলে সীল দেয়া থাকবে। তাছাড়া প্রিন্টেটের তারিখটা অবশ্যই ২০০০ সালের পরে হবে।
২. নামজারি খতিয়ান
এই খতিয়ান চেনার সহজ উপায় হলো খতিয়ানের ডানপাশে কেস নং দেয়া থাকবে এবং তার উপরে জোত নং দেয়া থাকবে। এক পৃষ্ঠায় হয় এবং এটিও লম্বালম্বিভাবে দাঁড়ি টানা তাকে।
খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত বিষয়সূমহ
খতিয়ানে কি কি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালার ১৮ নম্বর বিধিতে বিবৃত করা হয়েছে। এ বিধি অনুযায়ী নিম্ন লিখিত বিবরণসূমহ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
১. খতিয়ানে অবশ্যই প্রজা বা খলদারের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
২. প্রজা বা দখলদার কোন শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।
৩. প্রজা বা দখলদার কতৃক অধিকৃত জমির অবস্থান শ্রেণী, পরিমান ও সীমানা।
৪. প্রজার জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা
৫. এষ্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
৬. খতিয়ান প্রস্তুতের সময় খাজনা এবং ২৮,২৯,৩০ বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা।
৭. গোচরণ, ভূমি, বনভূমি ও মৎস্য খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ।
৮. যে পদ্ধতিতে খাজনা ধার্য করা হয়েছে তার বিবরণ।
৯. যদি খাজনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে যে সময়ে ও যে পদক্ষেপে বৃদ্ধি পায় তার বিবরণ।
১০. কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কতৃক পানির ব্যবহার এবং পানি সরবরাহের জন্য যন্ত্রপাতি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রজা ও জমির মালিকের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্যের বিবরণ।
১১. প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত ও তার পরিণতি।
১২. পথ চলার অধিকার ও জমি সংলগ্ন অনান্য ইজমেন্টের অধিকার।
১৩. নিস্কর জমি তার বিবরণ।
১৪. ২৬ নং ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
এছাড়া একটি খতিয়ানে তার নিজস্ব খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বাট্টা নম্বর, এরিয়া নম্বর, মৌজা নম্বর ও জে এল নম্বর থাকে।
এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে খতিয়ান পেতে ভিজিট করুন https://eporcha.gov.bd/