বর্তমানে বাংলাদেশে গাছ লাগানোর হেরিক পড়ে গেছে। দামে কম হওয়ার কারণে অনেকেই ইউক্যালিপটাস গাছ লাগান। শহর বা গ্রামে, পথেঘাটে কিংবা যেকোনো ফাঁকা জায়গায় বা চাষের জমিতে চোখ পড়ে এই গাছটি। গাছটি লাগিয়ে আমরা অজান্তেই পরিবেশের ক্ষতি করছি নাতো?
চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এ গাছটি আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর?
ইউক্যালিপটাস ডালপালার দিক থেকে বিস্তার না ছড়ালেও, মূল কিন্তু প্রায় ১৫ মিটার গভীর পর্যন্ত হয়ে থাকে। পানি ও খনিজ লবণ শোষণ ছাড়াও অতিরিক্ত পানি শুষে ডাল পালায় জমা রাখে। ফলে যে জায়গায় গাছটি লাগানো হয় সেই স্থানটি হয়ে পড়ে পানি শূন্য ও শুষ্ক। জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যায়।
শুধু তাই নয়, পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে অন্য প্রজাতির গাছের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে ফেলে। এর ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে যায়।
দেশের উত্তর অঞ্চলে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হার বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব কারনেই উত্তর জনপদের মাটি তুলনামূলক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মাটির আদ্রতা কমায় বিভিন্ন রকম উপকারী কীট-পতঙ্গ হ্রাস পাচ্ছে ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। ফলে ধীরে ধীরে তা মরুময় অঞ্চলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাধারনত কৃষি জমির অইলে ও বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় মানুষ এই কাজটি লাগিয়ে থাকে। গাছটি উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিই বেশি করে। ইউক্যালিপটাসের ডালপালা ও পাতা জমিতে পরলে জৈব সারের পরিবর্তে অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মত কাজ করে। যার ফলে জমিকে অনুর্বর করে তোলে। গাছটির ডাল ও পাতা রাসায়নিক এর মত কাজ করার কারণ হলো এই গাছের ডালপালাতে দাহ্য জাতীয় উপকরণ বিদ্যমান। এর ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়।
এই গাছটিতে অধিক পরিমাণে তেল থাকায় এটা বেশ দাহ্য স্বভাবের হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়াতে ইউক্যালিপটাস গাছটিকে অগ্নি সৃষ্টিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই অস্ট্রেলিয়ানরা আবাসিক এলাকা বা ঘরবাড়ি আছে এমন জায়গায় এই গাছ থাকলে কেটে ফেলেন। তবে সেখানেও সড়কের ধারে সারিবদ্ধ ভাবে এ গাছটি লাগানো হয়।
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭০০ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস পাওয়া যায়। পাপুয়া নিউ গিনি ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এর বিস্তার রয়েছে প্রাকৃতিকভাবেই। সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মাত্র ১৫ টি প্রজাতি।
দ্রুতবর্ধনশীলতা এবং অভিযোজন ক্ষমতার কারণে এটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গাছটি তার আশেপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকার ও ভূগর্ভের প্রায় ৫০ ফুট নিচের পানি শোষণ করে আকাশে উড়িয়ে দেয়। গাছটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় পানি শোষণ করে আর বাতাসে ছড়াতে থাকে। মৌসুমি জলবায়ু যুক্ত পরিবেশের জন্যও অনেক ক্ষতিকর এই গাছ । আশেপাশে অন্য কোন প্রজাতির গাছ ভালোভাবে জন্মাতে পারেনা কারণ এর পাতায় প্রচুর টক্সিন থাকে যা গাছের গোড়ায় পড়ে আশেপাশের মাটিকেও বিষাক্ত করে ফেলে।
ইউক্যালিপটাসের ক্ষতিকর দিক বেশি থাকলেও এর কিছু উপকারও আছে বটে। তবে তা খুবই সামান্য। তাহলে আমরা এই গাছটির উপকারগুলো একটু জেনে নেই-
উপকারিতা
- ইউক্যালিপটাস গাছের পাতায় যে টক্সিন থাকে তা হতে মশা বা বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয়।
- এই গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল।
- বিভিন্ন দেশে ঘরবাড়ি তৈরিতে কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- তাছাড়া এই গাছের কাঠে ঘুনপোকা ধরে না।
উপকারের থেকে যেহেতু এই গাছের ক্ষতিকর দিকই বেশি, আর আমাদের পরিবেশের জন্য ঝুঁকি স্বরূপ সেহেতেু এ গাছটি না লাগিয়ে দেশীয় পরিবেশের জন্য উপকারী গাছ নির্বাচন করা উচিত। ফলে পরিবেশ যেমন বাঁচবে, তেমনি ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য বজায় থাকবে।
আরো দেখুন