শীতকালে সবজির কথা মনে হলে বলুন তো কোন সবজিটি সবার আগে মাথায় আসে? ঠিক তাই, উত্তর ফুলকপি। শীতকালীন সবজিগুলোর মাঝে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সবজি বলা হয় ফুলকপিকে। এটি এমন একটি সবজি যা সাধারণত রান্না করে, সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে বা ভেজে, নানান ধরনের সুপ তৈরিসহ বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়।
এতে ৮৫% পানি থাকে এবং খুব অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে। উপাদানও ভরপুর এই ফুলকপি। যেমন ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটকেমিকেলে ঠাসা। তাছাড়াও এতে থাকা সালফার সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য ভীষণ কার্যকর। যকৃৎ থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান দূর করে এটি শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাহলে আসুন জেনে নিন এর বাকি গুণগুলো
যত গুণ আছে ফুলকপির-
পুষ্টির চাহিদা পূরণে-
সঠিক পরিমাণ পুষ্টি শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখাতে সাহায্য করে। দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণে নিয়মিত ফুলকপি খেতে হবে। ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। পাশাপাশি আছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, পটাসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। মস্তিষ্ক ভালো রাখতেও এটি ভূমিকা রাখে।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে-
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ফুলকপিতে থাকা সালফোরাফেন সাহায্য করে। এটি ধমনীতে জমা চর্বি প্রতিরোধ করে। এই উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ফুলকপির খাদ্যতালিকাগত ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা রাখে। গবেষণা মতে সালফোরাফেন ডিএনএ এর মিথাইলেশনের সাথে সম্পর্কিত যা কোষের স্বাভাবিক কাজের জন্য এবং জিনের সঠিক প্রকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, বিশেষ করে ধমনীর ভেতরের প্রাচীরের।
ক্যান্সার প্রতিরোধে-
ক্যান্সার একটি মারাত্মক ব্যাধি, তবে ফুলকপি তা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফুলকপিতে থাকা সালফোরাপেন ক্যান্সারের কোষকে মেরে টিউমার বাড়তে দেয় না। স্তন ক্যানসার, কোলন ও মূত্রথলির ক্যানসারের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাও আছে ফুলকপির।
ওজন কমাতে ফুলকপির গুরুত্ব
আমাদের খাদ্য পাশের পরিবর্তনের কারণে স্থূলতা এখন একটি বড় সমস্যা। প্রধান কারণ শরীরে ক্যালরি বেড়ে যাওয়া। এই ক্যালোরি কমাতে যাদু করে ভূমিকা পালন করে ফুলকপি। আমেরিকান কৃষি বিভাগ বলছে, ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে মাত্র ২৫ গ্রাম ক্যালরি থাকে। তাই ফুলকপির তৈরি খাবার খেলে খুব বেশি ওজন বাড়বে না। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে ২ গ্রাম ফাইবার থাকে। ফলে ফুলকপি খেলে পেট ভরা অনুভূত হয়। সেকারণে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে।
ফাইবার হজমশক্তি ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুলকপিতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় এই দুই ধরনের ফাইবারই রয়েছে যা শরীরের হজমশক্তি ঠিক রাখে।
হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে
ফুলকপিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফ্লোরাইড যা দাঁত ও মাড়ির বেশ উপকারী। এছাড়া হাড় শক্ত করতেও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
পরিপাকতন্ত্র ভালো রেখে পরিপাকে সাহায্য করে-
আমরা জানি, খাবার পরিপাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফার-জাতীয় উপাদান ভাল কাজ করে যা ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। ফুলকপি খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে-
চোখ মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি সুস্থ রাখতে ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন যা পূরণে ফুলকপির তুলনা নেই।
শরীরকে বিষমুক্ত হতে সাহায্য করে
শরীর পরিষ্কার হতে সাহায্য করে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টি উপাদান তা এই ফুলকপিতে বিদ্যমান। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন, কায়েম্ফেরোল, কোয়ারসেটিন, রুটিন, সিনামিক অ্যাসিডসহ এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরকে সুরক্ষা করে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে এবং বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর গতির করে। এছাড়াও যা এনজাইমকে সক্রিয় করে এবং ডিটক্স হতে সাহায্য করে গ্লুকোসাইনোলেটস যা ফুলকপিতে রয়েছে।
মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে-
যৌগ কোলাইন নামে ফুলকপিতে আরেকটি উপকারী উপাদান থাকে। এই কোলাইন একটি বি ভিটামিন। এই ভিটামিন মূলত মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। তাছাড়া কলিন নামে ফুলকপিতে এক ধরনের পানিজাতীয় পুষ্টি উপাদান আছে যা মস্তিষ্কের কগনিটিভ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে-
রক্ত তৈরিতে মানব শরীরে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে যা ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে এবং যে-সব গর্ভবতী মা আছেন তাদের জন্য ফুলকপি অত্যন্ত জরুরি।
ত্বক ও চুলের যত্নে-
কম ক্যালরিযুক্ত ও উচ্চমাত্রার আঁশসমৃদ্ধ খাবার ত্বক ও চুলের যত্নে বেশ উপকারী। আর এগুলো ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাছাড়া ত্বকে বিভিন্নধরণের সংক্রমণ দেখা দেয় যা রোধে ফুলকপি সহায়তা করে।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমন শীতকালীন সর্দি, ঠান্ডা, কাশি জ্বর ভাব, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গা-ব্যথা দূর করতে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ ও ‘কে’ প্রয়োজন যা ফুলকপিতে আছে। তাই সবার উচিত সুস্বাদু একটি শীতকালীন সবজি হিসাবে খাবার তালিকায় রাখা।
আরও দেখুন