প্রশ্নটা যদি আপনাদের করা হয় তাহলে উত্তর কি হতে পারে?
এতক্ষণ নিশ্চয়ই ভাবতে বসে গেছেন। ঠিক তাই আজ আমরা কথা বলব দেশের সবচেয়ে বেশি পর্যটন স্পট আছে তেমন একটি জেলাকে নিয়ে অর্থাৎ বান্দরবান।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, এর একটি জেলা বান্দরবান। এটি বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্পটের জেলা হিসেবে জনপ্রিয়। এখানকার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাঁড়ে এর সবুজে ঢাকা পাহাড়, উন্মুক্ত জলপ্রপাত এবং ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর সংস্কৃতি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বান্দরবানের সেরা পর্যটন স্পটগুলো সম্পর্কে
নীলগিরি, থানচি
নীলগিরি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। এটিই বাংলাদেশের অন্যতম উঁচু শৃঙ্গ। এই এলাকাটি পুরো মেঘে ঢেকে থাকার কারণে পর্যটকরা নীলগিরিকে নাম দিয়েছেন ‘মেঘের দেশ’। নীলগিরির সূর্যোদয়ের মুহূর্তটি আশ্চর্যজনক এবং কুয়াশাচ্ছন্ন শীতকালে এটি যেকোনো পর্যটককে বিমোহিত করবে। মনোরম হেলিপ্যাড নীলগিরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। পর্যটন এলাকাটির নিরাপত্তায় নিযুক্ত আছে বাংলাদেশের সেনাবাহীনি।
চিম্বুক পাহাড়, থানচি
চিম্বুক পাহাড়, থানচি বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চিম্বুক পাহাড়, থানচি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চান্দের গাড়ি দিয়ে চিম্বুক ভ্রমণের সময় এর চারপাশের প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। পর্যটকরা যখন এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকায়, তখন তারা মেঘের ভেলা দেখতে পায়। বান্দরবান শহর থেকে পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিকাল ৪টার পর চিম্বুক-থানচি রুটে কোনো যানবাহন চলে না। তাই চিম্বুক পাহাড়ে যেতে হলে বিকাল ৪টার আগেই যেতে হবে। পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা একসঙ্গে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে।
নীলাচল, বান্দরবান সদর
নীলাচল বান্দরবানের প্রধান? শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় অবস্থিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৬শ ফুট উপরে অবস্থিত। এই স্পটে বর্ষা, শরৎ কিংবা হেমন্ত এই তিন ঋতুতেই মেঘ ছোঁয়া পাওয়া যায়। নীলাচলের বাইরের দিকটা ছিন্ন-ভিন্ন পাহাড় দ্বারা সাজানো হলেও ভেতরটা খুবই প্রশান্ত। কোথাও বিস্তীর্ণ দিগন্তের ঢালের রাস্তা, কোথাও পাহাড়ি পাড়া, আর তার সঙ্গে রূপালী নদী যেন শিল্পীর আঁকা ছবির মতো। মেঘহীন আকাশে নীলাচল থেকে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার ছোট্ট রাস্তাটি নীলাচলের পথ। এই পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ে উঠতে হবে।
স্বর্ণ মন্দির, বান্দরবান
স্বর্ণ বৌদ্ধ মন্দিরটির আসল নাম বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির, এটি বান্দরবানের সেরা পর্যটন স্পট সমূহের মথ্যে একটি। মায়ানমারের কারিগরদের কাঠের তৈরি এই অনন্য মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই স্বর্ণ মন্দিরে যেতে হলে অবশ্যই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে যেতে হবে। আর সকালে যেতে না চাইলে দুপুর পৌনে ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে যাওয়া যায়। ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে মন্দিরটিতে প্রবেশ করেন দর্শনার্থীরা। উপভোগ করতে পারেন এর স্থাপত্য এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য।
বগালেক, রুমা
বগালেক অবস্থিত বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। এটি নীল পানির লেক। এর সৌন্দর্য্য দেখতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক আসেন এখানে। বর্ষাকালে রাস্তার বেহাল দশার কারণে বগালেকে যাওয়া বেশ কষ্টকর। শীতের মৌসুমে পর্যটকরা ক্যাম্প ফায়ার করতে পারেন, যেটি নিঃসন্দেহে একটি দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে। বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। আর রুমা বাজার থেকে বগালেকের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। বর্ষার সময় গাড়ি সরাসরি বগালেক পর্যন্ত যায় না। তাই প্রথমবার বগালেক যেতে হলে পায়ে হেঁটে যাওয়া জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, থানচি
শৈলপ্রপাত ঝর্ণাটি বান্দরবানের থানচি থানায় অবস্থিত। জলপ্রপাতটি বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৮কিলোমিটার দূরে। ঠাণ্ডা এবং স্বচ্ছ পানির জলপ্রপাত এটি। স্বচ্ছ পানির নিচে প্রচুর পাথর দেখতে পারবেন। ঝর্ণাটি স্থানীয়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির একটি বড় উৎস। জলপ্রপাতের বাইরে একটি বাজার রয়েছে ঠিক আছে এই দুইটাযেখানে পর্যটকরা তাঁতের পণ্য এবং স্থানীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারবেন। জানতে পারবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে। বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণীয় চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি পথের মাঝেই পড়ে শৈলপ্রপাত ঝর্ণাটি। তাই নীলগিরি ভ্রমণে গাড়ি মাঝ পথে থামিয়ে এই ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
চলবে…