দেশীয় আপেল বলতে আমরা সাধারণত পেয়ারাকেই বুঝি। আর পেয়ারা মূলত বর্ষা মৌসুমের একটি ফল। তবে এখন প্রায় সারাবছরই এটি বাজারে পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে অন্যান্য ফলের তুলনায় পেয়ারার অনেক বেশি। আমলকী বাদে যদি অন্য কোনো ফলে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় তা হলো পেয়ারা।
সব ফলে সাধারণত ভিটামিন এ সরাসরি পাওয়া যায় না। ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হওয়ার আগে এটি প্রথমে ক্যারোটিন রূপে থাকে। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ক্যারোটিন আবশ্যক। চোখের রেটিনা ও কোষের সুস্থতা বজায় রাখতে এটি সাহায্য করে। পেয়ারাতে যেটি প্রচুর পরিমাণে থাকে তা হলো ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এ দুটি উপাদান শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক-
বর্তমান সময়ের প্রচলিত রোগ হলো ডায়াবেটিস। পেয়ারা বা পেয়ারার রসে থাকা উপাদান এক্ষেত্রে খুব কাজে দেয়। শুধু পেয়ারা নয়, পেয়ারা পাতার রসেও ডায়াবেটিস প্রতিরোধী উপাদান ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় কাজে দেয়।
১ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ কচি পেয়ারা পাতার শুকনো মিহি গুঁড়ো ৫ মিনিটের মত ভিজিয়ে ছেঁকে পানি পান করা যেতে পারে প্রতিদিন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা-
ভিটামিন এ চোখের কর্নিয়াকে সুস্থ রেখে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। আর এটি কাঁচা পেয়া প্রচুর পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়ক-
রক্ত চাপ ও রক্তের লিপিড কমে আনতে পেয়ারা বেশ উপকারী। পেয়ারাতে শুধু ভিটামিন সি নয়, প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়ামও রয়েছে। নিয়মিত হৃদস্পন্দনের এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পটাশিয়াম ভাল কাজ করে। তবে নিয়মিত লাইকোপিনসমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও কমাতে সহায়তা করে।
ঠান্ডা জনিত সমস্যার সমাধানে-
পেয়ারেতে থাকা উচ্চ পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি ঠান্ডা জনিত সমস্যা শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লাগা, সর্দি–কাশি, ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে বেশ সহায়ক।
পাকস্থলীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে-
পেয়ারার আর একটি গুণ হলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা পেটের গোলযোগে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পাকস্থলীকে সুস্থ স্বাস্থ্য রাখতে পেয়ারাতে থাকা অ্যাস্ট্রিজেন্ট ও অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান সাহায্য করে৷
ক্যান্সারের প্রবণতা কমায়-
পেয়ারাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন এর মত অনেকগুলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারে। পেয়ারা প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের জন্য খুবই উপকারী।
মানসিক অবসাদরোধে সহায়ক-
বর্তমান সময়ে মানুষ মানসিক অবসাদে ভোগেন বেশি। এক্ষেত্রে পেয়ারার মাঝে থাকা বিভিন্ন উপাদান বিশেষ করে পানি মন সতেজ রাখতে খুব কাজে দেয়।
ত্বক ও চুলের যত্নে পেয়ারা-
পেয়ারাতে অন্য উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা শীতে ত্বকের রুক্ষতা ভাবও পা ফাটা রোধে ভালো উপকারী।
ঋতু সময়কালীন সময়ে ব্যথা দ্রুত নিরাময়ে-
এটি বর্তমান সময়ে মেয়েদের এমন একটি সমস্যা যা ওষুধেও পুরোপুরি কাজ হয় না। তবে যদি পেয়ারার পাতা চিবিয়ে বা রস খান তবে ব্যথা দ্রুত সময়ে উপশম হতে পারে।
হৃদ্রোগে সহায়ক-
নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
থাইরয়েড গ্রন্থি সচল রাখতে সহায়ক-
কপার সমৃদ্ধ ট্রেস উপাদান পেয়ারাতে থাকায় এটি থাইরয়েড গ্রন্থি সচল রাখতে সহায়তা করে।
এছাড়াও পেয়ারা আরও যে-সব রোগের প্রতিরোধ করে যেমন ডায়রিয়া, এছাড়াও ফলটিতে থাকা ক্যারটিনয়েড, পলিফেনল, লিউকোসায়ানিডিন ও অ্যামরিটোসাইড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখে। কেটে গেলে ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এতক্ষণ তো জানলেন পেয়ারের নানান গুণ। পেয়ারা যেহেতু এখন বারোমাসি পাওয়া যায় তাই আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। এতে সাশ্রয়ী মূল্যে যেমন শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে তেমনি বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।