এলাচ এক ধরণের মশলা,যার ইংরেজি নাম Cardamom (Elach)।
রান্নায় এলাচের ব্যবহার হয় খাবারের সুগন্ধ ও স্বাদ বৃদ্ধিতে। তবে এই মসলার ব্যবহার কেবল মাত্র রান্নাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটিতে নানা ওষুধের গুণাবলি রয়েছে যা স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভূমিকা রাখে।
এলাচে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, কোলেস্টেরল, ফাইবার, নিয়াসিন, রাইবোফ্লাভিন, পাইরিডক্সিন, থিয়ামিন, ইলেক্ট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, সি সহ আরো অনেক উপাদান।
এলাচের উপকারিতা :
প্রথমত আমরা দেখে নেই কোন কোন রোগের উপশম করে-
মানব শরীরের বিভিন্ন রকমের সমস্যা যেমন সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা, রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা ইত্যাদি থেকে এলাচ মুক্তি দেয়। তাছাড়া হুপিং কাশি, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ও ফুসফুস সংক্রমণের মত রোগ দূর করতে সাহায্য করে এই এলাচ।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় সহায়তা করে-
এলাচ উচ্চচাপ কমাতে খুব উপকারী। স্যুপ বা স্টু-এর মধ্যে এলাচ মিশিয়ে খেলে খুব সহজেই কিছু দিনের মধ্যে রক্তচাপ নিচে নামতে শুরু করে। হৃদ্রোগ প্রতিরোধ হয় এবং হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে।
হৃৎস্পন্দন নিয়মিত করতে সহায়তা করে-
আমাদের শরীরে রক্ত, তরল এবং কোষের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো পটাশিয়াম। এই খনিজের প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে আপনার হৃদস্পন্দনকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে করে।
রক্তাল্পতায় কমিয়ে আনতে সহায়তা করে-
এলাচের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো তামা, আয়রন। আর এ উপাদানগুলো লোহিত রক্তকণিকা এবং সেলুলার বিপাক উৎপাদনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধার সমস্যা সমাধানে এলাচের ভূমিকা রয়েছে। গরম দুধের মধ্যে দু-এক চামচ এলাচি গুঁড়া ও হলুদ গুঁড়া দিন। এতে একটু চিনি যোগ করতে পারেন। এতে শরীরের দুর্বলতা দূর হবে। এছাড়া প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।
শ্বাসকষ্ট উপশমে সহায়তা করে-
এলাচ আপনার ফুসফুসের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিয়ে হাঁপানি, ঠান্ডা এবং কাশির মতো শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। যা শরীরকে অভ্যন্তরীণভাবে উত্তপ্ত করে কফ বের করে দিতে সাহায্য করে এবং বুকের যানজট দূর করে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে সতেজ রাখতে সহায়তা কর-
এলাচ যেহেতু সুগন্ধি মসলা সেহেতু এটি নিয়মিত খেলে মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি মাড়ির ইনফেকশন, মুখের ফোঁড়া সহ দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে এটিকে প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনারও বলা যায়।
খাবার পরিপাকে সহায়তা করে:
হজমের গতিকে উন্নত করতে এলাচ সাহায্য করে কেননা এলাচ হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক কার্মিনেটিভ। এ ছাড়া পেটের আস্তরণের প্রদাহ কমাতে, হার্ট পোড়া এবং বমি বমি ভাব কমাতেও অনেক কার্যকরী এলাচ। দীর্ঘদিন থেকে যারা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ভুগছেন, তারা খাবার শেষ করে বসে না পড়ে এক দানা এলাচ মুখে দিয়ে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করুন। এতে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মাথা ব্যথা উপশমেও সহায়তা করে-
গরম পানিতে এলাচ গুঁড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে পান করলে, মাথা ব্যথা কমতে শুরু করে। মানসিক চাপ কমাতে এই মসলা চায়ের সাথে মিশিয়ে পান করলে বেশ উপকার মেলে।
ত্বকের ক্ষতিরোধে সহায়তা করে-
মানুষের ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক উপকারী উপাদান। এলাচের মাঝে এই উপাদানের দেখা মেলে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে বয়সের ছাপ কমায়। এছাড়া চোখের নিচের বলিরেখা পড়তে বাঁধা দেয়। কোনো কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা পূরণে বেশ সহায়ক এই এলাচ।
ওজন কমাতে সহায়তা করে-
কথায় আছে, ‘যারা ওজন কমাতে চান, এক চামচ এলাচের গুড়া খান’। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য এলাচের গুড়া হতে পারে উৎকৃষ্ট এক ভেষজ সমাধান।
হিচকি সমস্যা সমাধানে-
বিভিন্ন কারণে হিচকি হয়। এই হিচকি নিরসনেও এলাচ খুবই কার্যকর। এক চা চামচ এলাচ গুঁড়া এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে সেটি সময় নিয়ে পান করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এর উপকার পেতে শুরু করবেন।
গ্যাস্ট্রাইটিসে উপকারী ও পেটের জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করে-
এলাচে বিভিন্ন উপাদান বিদ্যমান যা আমাদের পেটের মিউকোসাল আস্তরণকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এটি আমাদের মুখের লালা উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে ক্ষুধা বাড়িয়ে দিতে এবং পেটের জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করে।
এছাড়া এলাচের খাদ্যগুণের কারণে অনেক ধরনের ক্যানসারের টিউমার বা কোষগুলি বাড়তে বাধাগ্রস্ত হবে। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এলাচ ব্যবহার করতে।
এলাচের যত গুণ, জানলে অবাক হবেন