পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ছোলা বা Chickpeas বাঙালির খাবারের তালিকায় একটি পরিচিত নাম। এটি কাঁচা বা রান্না দু’ভাবেই খাওয়া যায়। রান্না করা ছোলা নাস্তায় বেশি ব্যবহার হয়। আর যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা মনে করেন সকালে খালি পেটে ভেজানো কাঁচা ছোলা খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। আসলে কি তাই?
ছোলাতে রয়েছে প্রোটিন,কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন বি-১ ও বি-২। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাসও রয়েছে ছোলাতে। তাছাড়া ফ্যাট রয়েছে খুবই সামান্য পরিমাণে। আর কাঁচা ছোলার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক, ছোলার কার্যকরী গুণাবলীগুলো-
গুণাবলী
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে
ডায়াবেটিস যেন আজকাল একটি সাধারণ রোগ হয়ে গেছে। তবে এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর নিয়ন্ত্রণ করতে দরকার সঠিক খাদ্যাভাস। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা ছোলা খাওয়ার পরামর্শ দেন ডায়াবেটিস রোগীদের।
কাঁচা ছোলার মাঝে থাকা প্রোটিন, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণা বলছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে হলে পানিতে ভেজানো ছোলা বেশ কার্যকরী।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে
খারাপ কোলেস্টেরল LDL-এর পরিমাণ যদি শরীরে বাড়তে থাকে তাহলে একাধিক সমস্যা হতে পারে। আর এই কোলেস্টেরলের প্রভাব সরাসরি মানুষের হার্টের উপর পড়ে। কাঁচা ছোলার মাঝে দ্রবণীয় ভোজ্য আঁশ উপাদানটি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম বেশ কার্যকরী যা কাঁচা ছোলাতে রয়েছে। তাই যারা ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা প্রতিদিন সকালে কাঁচা ছোলা খেতেই পারেন।
পরিপাকে সহায়তা করে
ভোজ্য আঁশ এমন উপাদান যা মানব শরীরের পরিপাকতন্ত্রে পরিপাকে সহায়তা করে হজমক্রিয়া সহজ করে। বিশ্বব্যাপি এই ভোজ্য আঁশের অভাব এক বিরাট সমস্যা। অথচ এটি খুব সহজেই ছোলাতে পেতে পারি।
ছোলাতে ‘র্যাফিনোজ’ নামক এক প্রকার দ্রবণীয় ভোজ্য আঁশ আছে, যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।
ক্যান্সার নিরাময়ে সহায়তা করে
মানুষের শরীরে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে ছোলা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও মায়ের গর্ভে নতুন শরীর গঠণে এবং সুরক্ষা দেয় বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে। এটি শরীরে ‘বিউটারেট’ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ফ্যাটি অ্যাসিড’ মানুষের শরীরের রোগাক্রান্ত ও মৃতপ্রায় কোষ নিরোসন করে ফলে সুস্থ কোষগুলো থাকে সুরক্ষিত। আর ‘কলোরেক্টাল ক্যান্সার’ দমন করে ছোলা এভাবেই কাজ করে।
শক্ত হাড় গঠণে
ভোজ্য আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড়েকে সুস্থ রাখে আর তা শক্তিশালী করে। এসবকিছু আমরা ছোলাতে পেয়ে থাকি।
চুলের সুস্বাস্থ্যে
চুল ভাল রাখতে ভিটামিন বি-৬, এ এবং ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন যা ছোলায় রয়েছে। তাছাড়া অকালে চুলে পাকা রোধে নিয়মিত ভেজানো ছোলা খাওয়া বেশ উপকারী।
বয়সের ছাপ এড়াতে
বয়সের ছাপ লুকাতে কে না চায়। ত্বকের বলিরেখা, শরীরের চামড়া কুচকানো এসব রোধে কাঁচা ছোলা ভীষন উপকারী।
রক্তাল্পতা কমাতে
রক্তাল্পতা রোধে আয়রনের ভূমিকা অনেক। যা ছোলায় পাওয়া যায়। এছাড়া অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমাতে ভেজানো কাঁচা ছোলা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ছোলার তেমন কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া না থাকলেও রয়েছে কিছু সাবধানতা-
নিশ্চয়ই ভাবছেনে! ছোলা খেতে আবার কিসের সাবধানতা?
তাহলে জেনে নেয়া যাক-
কৌটাজাতকৃত ছোলায় সাবধানতা
বাজারে ছোলা দু’ভাবে পাওয়া যায়। কেজিদরে বিক্রয়জাত এবং কৌটাজাত। কৌটাজাত ছোলায় বিভিন্ন রাসায়ানিক ‘প্রিজারভেটিভ’ দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়ে থাকে। যদি এক বছরের মধ্যেই খাওয়া হয় তবে কোন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়না। যদি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয় তখন কৌটায় মরিচা ধরার সম্ভবনা থাকে। আর তা ছোলায় মিশে যেতে পারে। তাই এক বছরের মধ্যেই কৌটাজাত ছোলা শেষ করে ফেলুন।
কৌটাজাতকৃত ছোলার বিষক্রিয়া হতে সাবধান
‘ব্যাক্টেরিয়াম ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম’ নামক ব্যাক্টেরিয়া খাদ্যে ‘বটিউলিজম’ নামে বিষক্রিয়া তৈরি করে। কৌটাজাত ছোলা যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয় তাহলে এই ব্যাক্টেরিয়া হতে পারে। এসব কৌটাজাত ছোলায় লবণ ও চিনি কম থাকে, ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা একটু থেকেই যায়। কেননা, যে খাবারে লবণ ও চিনির মাত্রা কম থাকে এবং অক্সিজেন কম পৌঁছায় সেখানেই ব্যাক্টেরিয়া বাসা তৈরি করে।
পরিমাণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
ছোলা এতোটা পুষ্টিকর খাবার যে, অনেকেই মনে করতে পারেন, বেশি খেলে হয়তো বেশি পুষ্টি পাব! কিন্তু এটা ঠিক না। কেননা, ছোলাকে ‘গ্লুটেন ফ্রি’ বলা যায় না। তাই বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ছোলা সারাবছর খাওয়া হলেও রমজানে কিন্তু পরিমাণ বেড়ে যায়। কেন, এই পরিমাণ বেড়ে যায়?
যেহেতু ছোলাতে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান যা শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। আর রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে শরীরে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে ছোলার চাহিদাও বেড়ে যায়। ইফতারিতে ছোলার ভুনা এবং ছোলার বিরয়ানি হিসাবেই এই দু’ভাবেই বেশি খাওয়া হয়।
তাহলেই বোঝাই যায়, আমাদের দেশে ছোলা কতটা জনপ্রিয়।
আরও দেখুন