Expensive fruits
ফল খেতে বসলেন। আর টেবিলে এক টুকরা ফলের দাম যদি লেখা থাকে পাঁচ লক্ষ টাকা! তখন আপনি কি করবেন? পকেটে কারি কারি টাকা না থাকলে আপনার এসব ফল শুধুমাত্র গুগল এ সার্চ দিয়ে দেখে যেতে হবে গলাধঃকরণ আর হবেনা। ঠিক সেই রকমই কিডনি বিক্রি করে ফল খেতে চাইলে এই তালিকা আপনাদের জন্য।
তাহলে এখন জেনে নেয়া যাক দামি ফলেরে তালিকায় কোন কোন ফল থাকছে-
১. ইউবারি কিং মেলন (Yubari King Melon)
দামি ফলেরে তালিকায় যার নাম প্রথমেই আসছে তা জাপানের এক সুস্বাদু ফল ইউবারি মেলন (তরমুজ)। সাধারণ মানুষের কল্পনার বাহিরে এর দাম। কেননা, যার এক কেজির দামে এক টুকরো জমি পাওয়া যাবে। ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এক কেজি ইউবারি তরমুজের দাম। প্রায় ৩২ লক্ষ টাকায় এক জোড়া ইউবারি মেলন বিক্রি হয়েছিল ২০১৯ সালে।
এ তরমুজ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিশেষ পরিবেশে জন্মায়। এ ফল চাষের উপযুক্ত পরিবেশ হলো আগ্নেয়গিরি সৃষ্ট মাটি এবং অতিরিক্ত বর্ষণ। জাপানের ইউবারি অঞ্চলে চাষ হওয়ায় নাম ইউবারি মেলন বলে ধারণা করা হয়। এই ফল বিক্রির উপযুক্ত হতে, সময় নেয় ১০০ দিন।
এটি ক্যান্টালুপ জাতের একটি ফল। যা জাপানের সাপোরোর নিকটবর্তী একটি ছোট শহর হোক্কাইডোর গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাষ করা হয়। ক্যান্টালুপ হলো আর্লস ফেভারিট এবং বারপি নামে দুটি জাত। ইউবারি কিং ঐ জাত দুটির একটি সংকর (“স্পাইসি”) জাতের ক্যান্টালুপ। একটি পরিপক্ব তরমুজ দেখতে পুরোপুরি গোলাকার এবং এর খোসাটা অন্যরকম মসৃণ হয়। চুগেন (Ghost Festival) এর সময় জাপানিরা উপহার হিসাবে ইউবারি কিং তরমুজ একটি কাঁচের উপর নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করে। যা কাঁচি দিয়ে কাটা হয়।
জাপানের একটি নিলামে সর্বশেষ 2019 সালে রেকর্ড করা মূল্যে অর্থাৎ ¥5 মিলিয়নে নিলামে একজোড়া ইউবারি তরমুজ কিনেছিলো টোকিও-ভিত্তিক পোক্কা সাপোরো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। যা বাংলা টাকায় মূল্য প্রায় ৩৬,৬৬,৭১৩ টাকা। কি আর খেতে চাইবেন এই ফল!
২. ডেনসুকি ওয়াটারমেলন (Densuke Melon)
এই ফলটিও উত্তর জাপানের হাক্কাইডো দ্বীপে অল্প পরিমাণে উৎপাদিত হয়। প্রতি বছরে প্রায় ১০,০০০ হাজার তরমুজ উৎপন্ন হয়। প্রতিটা তরমুজ ৬১০০ ডলারে বিক্রি হয়। বাংলাদেশের টাকা যা প্রায় ৬,৭৩,০০০ টাকার মতো। এর ওজন প্রায় ২৪ পাউন্ড।
৩. রুবি রোমান গ্রেপ (Ruby Roman Grape)
জাপানি রুবি রোমান আঙ্গুরকে বিরল বিলাসবহুল আঙুর বলা যেতেই পারে। ‘Table Grape’ হল এর আরেকটি নাম। দেখতে কিছুটা পিং পং বলের মতো। এ ফলের শুরু ২০০৮ সালে জাপান ও ইশিকাওয়াতে। যার প্রতি গুচ্ছের দাম ৪০০০ হাজার ডলার। বাংলা টাকায় হিসেব করলে প্রায় ৪,৪১,০০০ টাকা।
৪. মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম (Miyazaki mango, Egg of the sun)
আমকে বিশ্বের সুস্বাদু ফল বললে ভুল হবেনা। এই পৃথিবীতে প্রায় ৩৫টি প্রজাতির আম রয়েছে। আর মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম। বিশ্বের সবচেয়ে দামি এ আম দেখতে সাধারণ আমের চাইতে একটু ভিন্ন। আকারটা বড় ও লম্বা, স্বাদের দিক থেকে মিষ্টি আর বাইরের অংশটা দেখতে গাঢ় লাল অথবা লাল-বেগুনির সংমিশ্রণে। এটি জাপানে জন্মায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়াজাকি আমের একটির দাম ৭০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এ হিসাবে জাপানের প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম কিনতে প্রায় ৩ লাখের মতো টাকা খরচ হয়ে যাবে। প্রতিটি আম প্রায় ৩৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।
ভারত এবং বাংলাদেশের খাগড়াছড়িতেও এখন এই প্রজাতির আম চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত এই আম প্রতিকেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাংলায় ‘সূর্যডিম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এই আম। মূলত চাহিদা হিসাবে জোগান কম, স্বাদে মিষ্টি, ভিন্ন রং এবং চাষপদ্ধতিতে কিছু বিশেষত্ব থাকার কারণে এত দাম বেশি।
এ আমে রয়েছে একসঙ্গে একাধিক পুষ্টিগুণ- জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ই, এ এবং কে ,কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদান যা শরীরের জন্য অপরিহার্য। যা হজমশক্তি বাড়ায় ফলে বদহজম বা পেটের সমস্যার সমাধানে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখা, ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে বেশ কার্যকরী।
৫. লস্ট গার্ডেনের আনারস- (Lost Garden Pineapple)
লস্ট গার্ডন আনারস চাষ হয় গ্রেট ব্রিটেনে। এই আনারসের ফলন আসে প্রায় দু বছর নিরলস পরিশ্রমের পর। কড়া নজরদারির মধ্যে প্রযুক্তির সাহায্যে গরম ঘরে তৈরি হয় এই তরমুজ। এক একটি আনারসের দাম ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
কাঠের পিট-আকৃতির ডিজাইনের পাত্রে এই আনারস উৎপন্ন হয়। তবে ঘোড়ার সার দিয়ে চাষ হয় এ আনারস এবং বিক্রি হয় নিলামের মাধ্যমে।
৬. কিউব আকৃতির তরমুজ (Cubed watermelon):
সেল বা ফোরকোর্ট তরমুজও দামের দিক দিয়ে অনেক উপরে। স্বাদে কিন্তু এই তরমুজগুলি সাধারণ তরমুজের মতোই তবে এর এত মূল্য হওয়ার কারণ আকৃতি।
জাপানের বিভিন্ন সুপারমার্কেট গুলোতে এই তরমুজ সুন্দর করে সাজিয়ে ফিতা দিয়ে বাঁধাই করে রাখা হয় উপহার দেওয়ার জন্য। প্রতিটি কিউব আকৃতির তরমুজ বিক্রি হয় বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। তাই ভাবুন তো আপনার শখ পূরণ করবেন নাকি একটি তরমুজ খাবেন।
৭. সেকাই ইচি আপেল (Sekai Ichi Apples):
দামি ফলের তালিকায় বেশিরভাগই জাপানের দখলে। সেকাই ইচি মানে জাপানি ভাষায় “বিশ্বের এক নম্বর”। এই আপেলের গড় পরিধি ৩০ থেকে ৪৬ সেন্টিমিটার (১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি) এবং ওজন হয় প্রায় ৯০০ গ্রাম। বলা যায় বৃহত্তম জাতগুলির মধ্যে একটি।
আপেলগুলির রং ফ্যাকাশে গোলাপী/লাল ডোরা দাগের। রসালো, মিষ্টি, এবং অন্যান্য জাতগুলির মতো কুড়কুড়ে না হলেও দাম কিন্তু আকাশচুম্বী ।
প্রতিটি আপেলের বাজার দর প্রায় ২২০০ টাকার মতো। সেকারণে সেকাই ইচি আপেলকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ফলগুলির মধ্যে একটি বলাই যায়।
আরও দেখুন
কি বলে। আমরা পেয়ারা খাবো, দরকার নেই এসব ফলের।