Camel বা উটকে জীবন্ত সাপ খাওযানো হয়! শুনে বেশ আশ্চর্য লাগছে তাই না! উট সাধারণত তৃণভোজী প্রাণী হলেও মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য ছোটখাটো বিভিন্ন প্রাণীদেরকেও খেয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে জীবন্ত বিষধর সাপ?
সত্যিই তাই। আজ জানবো তারই বিস্তারিত।
উট সম্পর্কে একটু জেনে নেই
উটকে মরুর জাহাজ বলা হয়। বর্তমানে পুরো বিশ্বে উটের Mongolian camel বা Bactrian camel, Dromedary বা Arabian camel ও Wild Bactrian camel এই তিন প্রজাতি উট বিদ্যমান। Bactrian camel ও Dromedary গৃহপালিত।
গৃহপালিত উটকে বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খৈল, ভুসি, খড় ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। উটের চর্মরোগ ও জ্বর হয়, কিন্তু এর প্রধান শত্রু কৃমি। ছয় মাস অন্তর অন্তর ভ্যাকসিন দিলে কৃমি দমন হয়।
পূর্ণবয়স্ক একটি উটের ওজন ৪৫০ থেকে ৬৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। উটের পায়ের উচ্চতা প্রায় দুই মিটারের মতো হয়। প্রতিটি পায়ের পাতায় চর্বি ও নমনীয় ফাইবারের পুরু আস্তরণ থাকে, যা লোম দিয়ে ঢাকা থাকে। যা দেখতে অনেকটা জুতার সোলের মতো বলেই একে ‘সোল প্যাড’ও বলা হয়। এই কারণে প্রচণ্ড গরম বালির মধ্যে অনায়াসে হেঁটে যেতে পারে। এদের কান তুলনামূলক ছোট এবং মোটা লোম দিয়ে ঢাকা। এর পাশাপাশি উটের দৃষ্টিশক্তিও প্রখর।
একটি মা-উট প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। উট প্রথমবার একটি বাচ্চা দেয় কিন্তু দ্বিতীয়বার থেকে দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা দেয়। জীবদ্দশায় একাট উট ১৫ থেকে ২০টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। অনুকূল পরিবেশে ৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে মরুর জাহাজ।
প্রতিকূল পরিবেশে অন্যান্য প্রাণীদেরকে প্রতিদিন কয়েক লিটার পানি খাওয়ানো হয়। অন্যদিকে এই প্রাণীটি মরুভূমিতে দিনের পর দিন পানি না খেয়ে কাটাতে পারে। উটের পা চিকন হওয়া সত্ত্বেও ভারি জিনিসপত্র বহন করতে পারে সহজে।
কখন উটকে সাপ খাওয়ানো হয়?
উটের এমন একটি বিরল প্রজাতির রোগ আছে, যে রোগটি হলে তাকে জীবন্ত বিষধর সাপ খাওয়াতে হয়।
এই বিড়ল প্রজাতির রোগটির নাম হল ‘‘হায়াম’’। এর অর্থ হলো জীবন্ত বিষধর সাপ গিলে খাওয়া। আর এই বিরল প্রজাতির রোগটি হলে উট একদমই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় এবং উটটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বিচিত্র ও রহস্যজনক রোগটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেও এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষেরা উটের এ রোগটি হলে তাকে জীবন্ত বিষধর সাপ খাওয়ায়।
এই রোগটি হলে উটকে ভয়ংকর পাইথন অথবা কিং কোবরা প্রজাতির সাপ খাওয়ানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উট নিজেই জীবন্ত সাপ খেয়ে থাকে। সাপটি গিলে ফেলার পর উটের তৃষ্ণা বাড়তে থাকে। এই অবস্থা সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে থাকে। বিষের কারণে উটের চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তে থাকে। বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পানি খুবই উপকারী।
উটের এই চোখের পানি এতই মূল্যবান যে স্থানীয়রা এই পানি বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন পশুর চামড়া দিয়ে তৈরিকৃত ব্যাগের মধ্যে উটের চোখের পানি সংরক্ষণ করা হতো। এই পানি অন্য পানি থেকে একদমই আলাদা।
এই পানিকে তিরয়াক বলে। এটিকে বিভিন্ন প্রাণীর বিষের প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি স্থানীয় মানুষের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই তিরয়াক সাপ, বিচ্ছুর বিষ থেকে বাঁচতে প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করে।
বিজ্ঞান কী বলে
উটের এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। চিকিৎসকেরা এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে করেন। তারা বলেছেন যে, উটের পরিপাকতন্ত্র অন্য প্রাণী তুলনায় অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। এর ফলে সাপের বিষ তাকে ঘায়েল করতে পারে না। আবার জীবন্ত সাপে গিলে ফেললে খুব সহজে তা হজমও হয় না।
মরুভূমির মতো প্রতিকূল পরিবেশে জীবন ধারণ করতে উট হর-হামেশাই সাপের চেয়েও বেশি বিষধর প্রাণী বা পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এর তুলনায় সাপের বিষ অতি সামান্য ব্যাপার।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, উটের সাপ খাওয়া বা খাওয়ানো বিশেষ কোনো বিষয় নয় এটি অত্যন্ত নগণ্য ব্যাপার। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন ইতিবাচক দিক প্রমাণিত নয়। এটি একটি ভ্রান্তিক ধারণা ও কুসংস্কার মাত্র।
আরো দেখুন
অদ্ভুত যত ওয়েবসাইট যেগুলো আপনাকে অবাক করবে
Camels eat live poisonous snakes