কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্য পদের সাথে বিশেষণ পদের যে সমাস হয়,তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।তবে পরপদের অর্থই প্রধান্য পায় এ সমাসে।
যেমন-বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু।
কর্মধারয় সমাস প্রধানত ৪ প্রকার হয়ে থাকে।
১। মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
২। উপমান কর্মধারয়
৩।উপমিত কর্মধারয়
৪। রূপক কর্মধারয়
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ব্যাসবাক্যে মধ্যপদের লোপ বা লুপ্ত হয় যে কর্মধারয় সমাসে, তাকেই মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। ব্যাসবাক্যে শুধু পূর্বপদ ও পরপদ থাকবে, বাকি সব লোপ পাবে। যেমন-ঘি মাখানো ভাত = ঘিভাত।
তাহলে কিছু মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস জেনে নেয়া যাক-
- চালে জন্মানো কুমড়া = চালকুমড়া
- সিংহ চিহ্নিত মার্কা আসন= সিংহাসন
- বিজয় নির্দেশক পতাকা= বিজয় পতাকা
- ধর্ম বিহিত কার্য = ধর্মকার্য
- সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন
- প্রাণ যাওয়ার ভয় = প্রাণভয়
- মোম নির্মিত বাতি= মোমবাতি
- ভিক্ষায় লব্ধ অন্ন= ভিক্ষান্ন
- চিকিৎসা বিষয়ক শাস্ত্ৰ = চিকিৎসাশাস্ত্র
- জ্যোৎস্না শোভিত রাত= জ্যোৎস্নারাত
- মৌ আশ্রিত মাছি মৌমাছি = মৌমাছি
- শিক্ষা বিষয়ক নীতি=শিক্ষানীতি
- পল মিশ্রিত অন্ন= পলান্ন (পল অর্থ মাংস)
- ধর্ম রক্ষার্থে ঘট= ধর্মঘট
- জীবন রক্ষার্থে বীমা= জীবনবীমা
- বাষ্প চালিত যান= বাষ্পযান
- ঘরে আশ্রিত জামাই= ঘরজামাই
- হাতে চালিত পাখা= হাতপাখা
- ষট অধিক দশ=ষোড়শ
- রাষ্ট্র বিষয়ক নীতি= রাজনীতি
- চিনি উৎপাদনের কল= চিনিকল
- খেয়া পারাপারের ঘাট= খেয়াঘাট
- আয়ের উপর কর= আয়কর
- সাহিত্য বিষয়ক সভা = সাহিত্যসভা
- হাতে পরা হয় যে ঘড়ি= হাতঘড়ি
উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমান অর্থ তুলনায় বা তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর উপমান বলা হয়, যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে ।
ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদ দুয়ের মাঝে ন্যায়’ শব্দটি বসবে। যদি সম্পর্ক সত্য হয়, তবেই কেবল ‘ন্যায়’ বসবে।
তাহলে কিছু উপমান কর্মধারয় সমাস জেনে নেয়া যাক-
- অরুণের ন্যায় রাঙা = অরুণরাঙা
- তুষারের ন্যায় শীতল = তুষারশীতল
- গো-র ন্যায় বেচারি = গো-বেচারি
- শশকের ন্যায় ব্যস্ত= শশব্যস্ত
- কাজলের ন্যায় কালো = কাজলকালো
- বিড়ালের ন্যায় তপস্বী = বিড়ালতপস্বী
- তুষারের ন্যায় ধবল = তুষারধবল
- কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল
- বকের ন্যায় ধার্মিক = বকধার্মিক
- গজের ন্যায় মূর্খ= গজমূর্খ
- ঘনের ন্যায় শ্যাম= ঘনশ্যাম
- মিশির ন্যায় কালো = মিশকালো
উপমিত কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। তবে এ সমাসে সাধারণ গুণের উল্লেখ থাকে না এবং উপমেয় পদটি পূর্বে বসে।
পূর্বপদ বা পরপদের মধ্যে পরোক্ষ বস্তুটির পরই ‘ন্যায়’ বসবে। এ সমাসের ব্যাসবাক্য দুইভাবে করা যায়।
তাহলে কিছু উপমিত কর্মধারয় সমাস জেনে নেয়া যাক-
- চাঁদের ন্যায় মুখ=‘চাঁদমুখ’ (মুখ চাঁদের ন্যায়)
- ফুলের ন্যায় কুমারী = ফুলকুমারী (কুমারী ফুলের ন্যায়)
- সিংহের ন্যায় পুরুষ = পুরুষ সিংহ (পুরুষ সিংহের ন্যায়)
- লতার ন্যায় বাহু = বাহুলতা (বাহু লতার ন্যায়)
- পদ্মের ন্যায় আখি= পদ্ম আঁখি (আঁখি পদ্মের ন্যায়)
- চাঁদের ন্যায় মুখ = চাঁদমুখ (মুখ চাঁদের ন্যায়)
- কমলের ন্যায় কর = করকমল (কর কমলের ন্যায়)
- পল্লবের ন্যায় কর = করপল্লব (কর পল্লবের ন্যায়)
- পল্লবের ন্যায় অধর= অধরপল্লব (অধর পল্লবের ন্যায়)
- লোচন পলাশের ন্যায় = পলাশলোচন
- কপি ফুলের ন্যায় = ফুলকপি।
রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমান হলো দৃশ্যমান বস্তু আর উপমেয় হলো অদৃশ্যমান বস্তু। এদের মধ্যে যদি অভিন্নতা কল্পনা করা হয় তাহলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়।
এ সমাসে উপমেয়(অদৃশ্যমান) পদ পূর্বে বসে আর উপমান(দৃশ্যমান) পদ পরে বসে।সমস্যমান পদে ‘রূপ’ যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়।
তাহলে কিছু রূপক কর্মধারয় সমাস জেনে নেয়া যাক-
- প্রাণ রূপ পাখি = প্ৰাণপাখি
- বিদ্যা রূপ সাগর= বিদ্যাসাগর
- জীবন রূপ প্রদীপ = জীবন প্রদীপ
- বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু
- মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
- সুখ রূপ সাগর = সুখসাগর
- প্রেম রূপ ডোর = প্রেমডোর
- মোহ রূপ নিদ্রা= মোহনিদ্রা
- শোক রূপ অনল = শোকানল
- ভব রূপ নদী= ভবনদী
- দিল রূপ দরিয়া= দিলদরিয়া
==========================================