পৃথিবীতে নানা আজব প্রজাতির প্রাণি বিদ্যমান। তবে বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে সবাই যে শুধু সুন্দর সেটা কিন্তু নয়। এই সুন্দরের আড়ালেই লুকিয়ে আছে বিষাক্ত এক প্রাণী। এইসব Dangerous animals গুলো নিয়েই আজকে আলোচনা।
১.বক্স জেলিফিশ (Box jellyfish)
বক্স জেলিফিশ এতটাই সুন্দর যে,মনে হবে একটু আদর করি। তাহলে ভাবছেন! এমন সুন্দর একটা প্রাণী কি করে এতটা বিষাক্ত হতে পারে? কিন্তু সত্য, জেলিফিশের এক একটিতে বিষের পরিমাণ এতটাই যে, অনায়াসে ৬০ জন মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
এই প্রাণীটি দেখতে যতটা সুন্দর, বিষাক্ত তার ঠিক ততটাই। অসাধারণ রূপের অধিকারী এই জেলিফিশ দেখতে অনেকটা স্বচ্ছ পর্দার মত। সে কারণে এটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী হিসেবে পরিচিত। সামুদ্রিক এই প্রাণীটি লম্বায় প্রায় ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই প্রাণীর বিষ মানুষের হৃৎপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র ও ত্বকের কোষকে আক্রমণ করে। বক্স জেলিফিশের আঘাতে তিন মিনিটের মাথায় একজন মানুষের মৃত্যু হবে পারে। এর আক্রমণে প্রতি বছর ২০-৪০ জন মানুষ ফিলিপাইনে মারা যায়।

২.মার্বেল কোণ শামুক (Marbled Cone Snails)
শামুকের নাম শুনে ভাবছেন তালিকায় এই প্রাণী কেন? শামুক তো একেবারে নিরীহ শান্ত স্বভাবের। হ্যাঁ, অনেকের থেকেও এই শামুক অনেক বিষাক্ত।
শামুকটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। খোলসটি দেখতে মার্বেলের মতো। যেন মার্বেল পাথর দিয়ে মোজাইক করা। আর দেখতে অনেকটা কোণ আইসক্রিমের মতো। একারণে এর নাম মার্বেল কোণ শামুক।
এখন ভাবছেন, সব সুন্দর প্রাণীই কি বিষাক্ত? কিন্তু তা না, প্রায় সব বিষাক্ত প্রাণীই দেখতে সুন্দর। তাই সাবধান, সুন্দর হলেই হাত দিয়ে ধরতে যাবেন না।
মার্বেল কোণ শামুকের কোণগুলো ভয়ানক বিষাক্ত হয়ে থাকে। বলা যায়, কোণ শামুক মানেই বিষ ভরা। অস্ট্রেলিয়ার গরম লবণাক্ত সামুদ্রিক পানিরত মার্বেল শামুকের দেখা বেশি পাবেন। তাই জলে নেমে গোসল করতে চাইলে এই প্রাণী হতে সাবধানে থাকুন।
৩.পয়জন ডার্ট ফ্রগ (Poison dart frog)
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ডেনড্রোবাটিডি পরিবারের একদল ব্যাঙের সাধারণ নাম পয়জন ডার্ট ব্যাঙ। যা পূর্বে পয়জন অ্যারো ব্যাঙ নামেও পরিচিত ছিল।
এই প্রজাতিগুলি দেখতে প্রায়শই উজ্জ্বল বর্ণের হয়ে থাকে। আর এই উজ্জ্বল বর্ণের জন্যই প্রজাতিটি বিষাক্ততার সাথে সম্পর্কিত, তাদের অন্যদের থেকে অপোজেটিক করে তোলে। ডেনড্রোবাটিডে পরিবারের আরও কিছু প্রজাতি রয়েছে, যাদেরও এক রহস্যময় বর্ণ থাকে যারা সামান্য বিষাক্ত বা নির্বিষ। তারা অনেক বড় ধরনের শিকার করে ও খায়। এই পরিবারের অনেক প্রজাতি এখন বিপদের সম্মুখীন,তাদের আবাসস্থল মানুষের দখলের কারণে ।
৪.ইনল্যান্ড তাইপান (Inland Taipan)
সব কথাটি শুনলেই আমাদের মধ্যে অজানা ভয়ের সঞ্চার হয়। কেননা এই সাপের বিষের কারণেই যে কোন প্রাণীর সহজে মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। তবে এই তালিকায় সবার উপরে আছে ইনল্যান্ড তাইপানের নাম। সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপের পরিবারে উপরের সারিতেই এর অবস্থান। মানুষ ও প্রাণী হত্যার জন্য এর এক ফোঁটা বিষই যথেষ্ট।
ফিয়ারস স্নেক (Fierce Snake) ও স্মল স্কেলড স্নেক (Small Scaled Snake) নামেও বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকা হয় । এরা বাস করে কুইন্সল্যান্ড এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্লাবনভূমির মাটির ফাটলে। ইঁদুরের গর্তেও দেখা যায় অহরহ। বাদামি কালো আবহ বা জলপাই-সবুজ বাদামি রঙের এই প্রজাতির সাপ একবার কামড় দিয়েই ক্ষ্যান্ত, একাধিকবার কামড়ে জর্জরিত করে দেয়। এক গবেষনায় দেখা গেছে, অন্য যেকোনো সাপের তুলনায় ইনল্যান্ড তাইপানের বিষ ১১০ মিলিগ্রাম বেশি তীব্র।
৫.ব্ল্যাক মাম্বা (Black mamba)
ইনল্যান্ড তাইপানের মতো পৃথিবীর দ্রুততম, মারাত্মক বিষধর সাপের তালিকায় প্রথম সারিতেই ব্ল্যাক মামবার স্থান। এরা তখনই প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বসে, যখন মারাত্মক ভয় পায়।
ব্ল্যাক মামবার আসল বাস দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চলে। এটা লম্বায় গড়ে ৮.২ ফুট (২.৫ মিটার) হওয়ায় আফ্রিকার দীর্ঘতম সাপ বলা যায়। সর্বশেষ ১৮ফুট (৪.৫ মিটার) লম্বা ব্ল্যাক মামবারও দেখা মিলেছে। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার গতিবেগ এদের। বিষ এতো তীব্র যে, মুহূর্তে একবার কামড়েই মৃত্যু হতে পারে একটি হাতিরও।

৬. কেপ বাফেলো (Cape buffalo)
তালিকার এ পর্যায়ে আছে মহিষের নাম। তবে তবে তা বিশে নয় ক্ষিপ্রতায়। সাধারণত শান্ত স্বভাবের প্রাণী কিন্তু এরা যে হিংস্র হতে পারে এটা অনেকের অজানা। হ্যাঁ, এমনি এক হিংস্র মহিষের কথা বলবো, যা আফ্রিকার তৃণভূমিতে রাজত্ব করে। এর নাম কেপ বাফেলো। বুনো মহিষ। এগুলো এতোটাই হিংস্র যেন সাক্ষাৎ যমদূত!
প্রতিটি কেপ বাফেলো কয়েক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের শরীরের ওজন এবং বদ মেজাজই হলো এদের শক্তি। একবার যদি কেউ এদের উত্ত্যক্ত করে, তাহলে আর রক্ষে নেই। মানুষের জন্য এ প্রাণী বিপজ্জনক। যদি কোন শিকারি এদের গুলি করে, সে তাকে চিনে রাখে এবং পরে তাকে মেরে ফেলে।
৭.সাইফু পিঁপড়া (Dorylus)
সাইফু পিঁপড়ের আরেক নাম ড্রাইভার পিঁপড়ে। এরা কখনও একা চলাফেরা করেনা। চলে ঝাঁকে-ঝাঁকে। প্রায় ৫ কোটি পিঁপড়ে নিয়ে একটি ঝাঁক তেরি হয়।এদেরকে ভয়ংকর প্রাণীর তালিকার উপরের দিকে রাখা হয়েছে।
বাসা বাড়িতে আমরা পিঁপড়েকে সাধারণত চিনি বা যে কোনও খাবার নিয়ে যেতে দেখি, কিন্তু এরা মারাত্মক হারে মাংসাশী।
মজার বিষয় হলো, এদের দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করার কারণে এরা যেকোনো প্রাণীকে একসাথে নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে। তাই মানুষসহ অন্যসব প্রাণীর জন্য এরা হুমকি স্বরূপ। চলাফেরার সময় পথে যে বা যারা বাধা করে সেটিকেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলে।

৮.পাফার ফিস (Puffer fish)
দেখতে সুন্দর হলেও সবচেয়ে বিপদজনক চরিত্রের মাছ হলো পাফার ফিশ। যদিও পাফার ফিশ স্বাভাবিক অবস্থায় খুব নিরীহ ছোট থাকলেও প্রতিপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। পালানোর পরিবর্তে এটি এটি পানি গিলতে শুরু করে আর বলের মতো ফুলে যায় যতক্ষণ না শত্রুর মতো আকার ধারণ করতে পারে।
নিজেকে রক্ষার করতে সে অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। এর শরীরে টেট্রোডোটক্সিন নামে একটি মারাত্মক বিষ আছে। যার প্রভাবে সহজেই ৩০ জনকে হত্যা করতে পারে।
এ জাতের মাছ ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, তবে বন্দী বা মাছের ট্যাঙ্কে থাকলে ১০ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না। চোখ গোলাকার, বেশ বড় এবং কালো। মুখের উপরের অংশটি তোতা পাখির চঞ্চুর মতো। পরিবেশের সাথে মিশে যেতে কালো বিন্দু রয়েছে।
এর ওজনও পরিবর্তিত হয় ১৫০ গ্রাম থেকে ১০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত। তবে তা প্রজাতির উপর নির্ভর করে। পাফার ফিশের কিছু প্রজাতির মাংস খুবই সুস্বাদু হলেও রান্নার আগে বিষ আলাদা করে নিতে হয়। বিষ আলাদার এই প্রক্রিয়াকে জাপানে ফুগু বলে। এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত, প্রশিক্ষিত পেশাদার শেফদের দ্বারা প্রস্তুত করা হয়।
এই প্রজাতির বেশিরভাগ গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রের পানিতে বাস করে।
৯. অস্ট্রেলিয়ান ফানেল-ওয়েব স্পাইডার
অস্ট্রেলিয়ান ফানেল-ওয়েব স্পাইডার বিষাক্ত প্রাণী গুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি রয়েছে। কিছু প্রজাতি বিষ তৈরি করে যা মানুষের জন্য বিপজ্জনক।
আকার ১ থেকে ৫ সেন্টিমিটার হলেও এদের প্রচুর বিষ গ্রন্থি রয়েছে যেগুলো তাদের চেলিসারির মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। নখ এতই শক্তিশালী যে নরম জুতা অনায়াসে ভেদ করতে সক্ষম।
অস্ট্রেলিয়ান ফানেল-ওয়েব মাকড়সার আবাস্থল আর্দ্র, শীতল যা পাথরের নীচে, পচনশীল গাছের নীচে। সাধারণত ঝোপঝাড়ে এবং শহরতলির বিভিন্ন স্থানে এদের দেখা মেলে।
১০. কিং কোবরা (King Kobra)
শুনে নামটি শুনলেই ভয়ঙ্কর অনুভূতির সৃষ্টি হয় মনোজগতে। বিশ্বের দীর্ঘতম বিষাক্ত সাপ কিং কোবরা। একটি পূর্ণবয়স্ক কিং কোবারা গড়ে ৩.১৮ থেকে ৪ মিটার (১০.৪ থেকে ১৩.১ ফুট) এবং ১৮ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।
এদের যদি কেউ উত্তেজিত করে তাহলে এরা অত্যন্ত বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। স্বভাবের দিক থেকে কিং কোবরা লাজুকে এবং সম্ভব হলে মানুষের সাথে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে। এর বিষ এতোটাই বিষাক্ত যে একক কামড়ে ২০ জন মানুষ এবং একটি হাতিকে হত্যা করতে পারে।
মূলত ভারত, দক্ষিণ চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃষ্টি বন এবং সমভূমিতে এবং আরামদায়ক হিসাবে বন, বাঁশের ঝোলা, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, উচ্চ-উচ্চতায় তৃণভূমি ও নদীতে কিং কোবরা বাস করে। অঞ্চলভেদে এরা রঙ পরিবর্তন করতে পারে।
বিশ্বে কিং কোবরার বিভিন্ন প্রজাতি পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত, পশ্চিম চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার ও ফিলিপাইনের অঞ্চলগুলোতে।
Dangerous animals
আরও দেখুন
কোন জাতের কুকুর পালবেন