Best dog for pet in Bangladesh
পোষ্য প্রাণী হিসাবে যার নাম সবার আগেই আসে তা হলো কুকুর। শুধু বিশ্বস্ততার জন্যই কুকুর পোষ্য প্রাণীর তালিকায় আসেনি বরং আকর্ষণীয় চেহারা জন্যও জনপ্রিয়। প্রতিটি মানুষ যেমন ব্যক্তিত্বে, স্বভাবে, চেহারায় আলাদা! কুকুরগুলোও তেমনি। একারণে মানুষ নিজের সাথে মিল রেখেও পছন্দের কুকুরটা বেছে নেয়।
পোষার জন্য বিভিন্ন কুকুর সম্পর্কে জানেবো-
১. ফরাসি বুলডগ (French Bulldog)
ফরাসি বুলডগ, যা বাংলাদেশে “ফ্রেঞ্চি” নামেও পরিচিত, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটি কুকুরের জাত। এরা তাদের সুন্দর চেহারা বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার এবং স্নেহময় স্বভাবের জন্য বিখ্যাত। ফ্রেঞ্চ বুলডগ একটি ছোট জাতের কুকুর। স্বভাবে খুবই চতুর। এদের বাদুড়ের মতো কান, কুঁচকে যাওয়া মুখ এবং নমনীয় প্রকৃতি মানুষের মন কেড়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট। দেখতে ছোট হলেও এদের ব্যক্তিত্বটা কিন্তু আকর্ষণীয়। এ কুকুরগুলি অভিযোজিত প্রকৃতির হওয়ায় অভিজাত পরিবারের জন্য মানানসই।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- ছোট থেকে মাঝারি আকারের কুকুর
- চ্যাপ্টা মুখ
- বড়, বাদামি রঙের চোখ
- ছোট্ট ও ঝুলন্ত কান
- ছোট লেজ, সাধারণত স্ক্রু আকৃতির (screw-shaped)
- মসৃণ এবং চকচকে পশম, বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে পাওয়া যায়, যেমন, ব্রিন্ডেল (brindle), fawn (ফন), এবং পাইড (pied)
স্বভাব:
- বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- চঞ্চল ও দূরন্ত
- মানুষের সঙ্গ পছন্দ করে
- শিশুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে
- অন্যান্য পোষা প্রাণীর সাথেও বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে
যত্ন:
- প্রতিদিনের হালকা ব্যায়াম প্রয়োজন
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন
- নিয়মিত গোসল এবং পশম পরিচর্যা করুন, বিশেষ করে চোখের ভাঁজগুলিতে (fold) জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করুন।
বিশেষ দক্ষতা:
- ফরাসি বুলডগ কুকুরগুলি তাদের সহজেই শেখার দক্ষতার জন্য পরিচিত।
- এছাড়াও, তাদের চ্যাপ্টা মুখের কারণে, গন্ধ ধরার ক্ষমতা কিছুটা কম, তাই শিকারের কাজে এদের ব্যবহার করা হয় না।
বাংলাদেশে ফরাসি বুলডগ:
বাংলাদেশে ফরাসি বুলডগ কুকুরগুলি এখনও অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়। তবে, তাদের ছোট্ট আকার, সুন্দর চেহারা এবং স্নেহময় স্বভাবের কারণে এরা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, একটি ফরাসি বুলডগ কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের বিশেষ যত্নের চাহিদা, যেমন, গরম আবহাওয়া সহ্য করতে না পারা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, মেটাতে পারবেন।
২.ল্যাব্রাডর রিট্রিভার (Labrador Retriever)
লাব্রাডর রিট্রিভার বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কুকুরের জাতগুলির মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশেও, এরা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এই বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময় কুকুরগুলি তাদের শক্তি, বুদ্ধি এবং সহজাত কাজ করার ইচ্ছার জন্য পরিচিত। এই কুকুরছানাগুলি এতোটাই বুদ্ধিমান যে,তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই সহজ। যে কোন পরিবেশের সাথে সহজেই মিশে যায়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- মাঝারি থেকে বড় আকারের কুকুর
- পেশীবহুল শরীর
- ঘন এবং মসৃণ পশম, সাধারণত কালো, হলুদ বা সাদা রঙের
- ঝুলন্ত কান
- বাদামি বা হলকা বাদামি রঙের চোখ
স্বভাব:
- অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- খুবই খেলাধুলোপ্রিয় ও চঞ্চল
- বুদ্ধিমান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ
- সহজেই মানুষের সাথে মানিয়ে নেয়
- শিশুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে
যত্ন:
- প্রতিদিনের ব্যায়াম ও মানসিক উদ্দীপনা প্রয়োজন
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের পরিচর্যা করুন
বিশেষ দক্ষতা:
- লাব্রাডর রিট্রিভার কুকুরগুলিকে তাদের দৃঢ় গন্ধ অনুসরণের ক্ষমতা এবং জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনার দক্ষতার জন্য পরিচিত।
- এই দক্ষতাগুলির জন্য বিভিন্ন কাজে, যেমন, সহায়ক কুকুর, উদ্ধারকারী কুকুর এবং শিকারের সহচর হিসাবে এদের ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে লাব্রাডর রিট্রিভার:
লাব্রাডর রিট্রিভার কুকুরগুলি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিবারের সদস্য হিসাবে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, একটি লাব্রাডর রিট্রিভার কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের সক্রিয় জীবনযাপনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন, কারণ এরা প্রচুর ব্যায়াম এবং মনোযোগের প্রয়োজন।
৩. কাভালিয়ার কিং চার্লস স্প্যানিয়েল Cavalier King Charles Spaniel
নামটা কঠিন হলেও এর চতুর প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের নজরকাড়া চোখ এবং সিল্কি পশম সহযেই সকলকে আকর্ষণ করবে। এরা মায়াময় প্রকৃতির হওয়ায় বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মানুষের সংস্পর্শে থাকতে ভালোবাসে । এই জাতের কুকুরের মায়াময় স্বভাব পশু-প্রেমী পরিবারের জন্য পছন্দ।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- ছোট আকারের কুকুর
- লম্বা, মসৃণ এবং সিল্কের মতো পশম, সাধারণত বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে পাওয়া যায়, যেমন, বাদামি ও সাদা, কালো ও সাদা, এবং ত্রি-রঙা
- বড়, গোল এবং বাদামি রঙের চোখ
- লম্বা ও ঝুলন্ত কান
স্বভাব:
- অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- খুব একটা খেলাধুলোপ্রিয় নয়, তবে হালকা ব্যায়াম পছন্দ করে
- শান্ত ও কোলাহল পছন্দ করে না
- শিশুদের সাথে মিষ্টি আচরণ করে
- অপরিচিতদের প্রতি সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ
যত্ন:
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের গতি বাঁধুন এবং জট পড়া এড়িয়ে চলুন।
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন।
- নিয়মিত গোসল এবং চোখের পরিচর্যা করুন।
বিশেষ দক্ষতা:
- ঐতিহাসিকভাবে, রাজকীয় পরিবারের সঙ্গী হিসাবেই এদের বেশি দেখা যেত। তাই, মানুষের সঙ্গ পছন্দ করা এবং ঘরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা তাদের একটি বিশেষ দক্ষতা বলা যায়।
বাংলাদেশে ক্যাভেলিয়ার কিং চার্লস স্প্যানিয়েল:
ক্যাভেলিয়ার কিং চার্লস স্প্যানিয়েল কুকুরগুলি বাংলাদেশে এখনও অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়। তবে, তাদের মিষ্টি স্বভাব, স্নেহময়তা এবং অ্যাপার্টমেন্ট বসবাসের উপযোগী হওয়ার কারণে এরা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, একটি ক্যাভেলিয়ার কিং চার্লস স্প্যানিয়েল কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের পশমের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন এবং তাদের শান্ত স্বভাবের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন।
৪: পোমেরিয়ান (Pomeranians)
আকারে ছোট এবং তুলতুলে নরম বন্ধুর খোঁজ করছেন, তাহলে পোমেরানিয়ানকে বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশে যা “পম” নামেও পরিচিত। নরম পশম এবং শেয়ালের মতো মুখ এদের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। দূরন্ত এবং প্রাণবন্ত হওয়ার পাশাপাশি এরা চতুরশ্রেনীর। এদের খুব সহজেই প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, এরা এতোটাই বুদ্ধিমান এবং কৌশলপ্রবণ যে কোন পরিবেশেই নিজেকে মানিয়ে নেয়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- ছোট আকারের কুকুর
- ঘন, দু’ স্তরের পশম – ভিতরের স্তর নরম ও পুরু, বাইরের স্তর লম্বা ও মোটা
- বিভিন্ন রঙের পশম পাওয়া যায়, যেমন, কমলা, ক্রিম, কালো, সাদা, এবং বাদামি
- শিয়ালের এর মতো চেহারা
- ছোট এবং ঝুলন্ত কান
- কালো চোখ
স্বভাব:
- বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- খুবই খেলাধুলোপ্রিয় ও চঞ্চল
- সতর্ক ও সাহসী
- অন্যান্য কুকুর এবং পোষা প্রাণীদের সাথে ভালো নাও মিলতে পারে
- শিশুদের সাথে সাবধানতার সাথে খেলতে দিন
যত্ন:
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের যত্ন নিন এবং জট পড়া এড়িয়ে চলুন।
- প্রতি কয়েক সপ্তাহে ভালো করে গোসল করিয়ে নেওয়া ভালো।
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন।
বিশেষ দক্ষতা:
- ঐতিহাসিকভাবে, খামারে এবং জাহাজে ইদুর তাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হতো।
বাংলাদেশে পোমেরিয়ান:
পোমেরিয়ান কুকুরগুলি বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, একটি পোমেরিয়ান কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের পশমের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন এবং তাদের সক্রিয় ও সতর্ক স্বভাবের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়াও, ছোট শিশু থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করুন, কারণ তারা কখনও কখনও অতিরিক্ত মাত্রায় চিৎকার বা রুক্ষ আচরণের প্রতি আক্রমনাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
৫. বিগল কুকুর (Beagle)
বিগল কুকুর একটি জনপ্রিয় জাতের কুকুর, যা বাংলাদেশেও ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই মিষ্টি স্বভাবের কুকুরগুলি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার, চঞ্চল মনোভাব এবং দীর্ঘ কানের জন্য পরিচিত।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- মাঝারি আকারের কুকুর
- চকচকে তুলতুলে পশম, সাধারণত তিন রঙের মিশ্রণ – কালো, বাদামি এবং সাদা
- লম্বা কান
- বড়, বাদামি চোখ
স্বভাব:
- বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্নেহময়
- খুবই চঞ্চল ও সক্রিয়
- অন্য কুকুর ও বাচ্চাদের সাথে ভালো মেলে
- শিক্ষাগ্রহী এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ
যত্ন:
- নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন
- প্রতিদিন দু’বার খাবার দিন
- নিয়মিত গোসল এবং পশম পরিচর্যা করুন
বিশেষ দক্ষতা:
- বিগল কুকুরগুলিকে তাদের দৃঢ় গন্ধ অনুসরণের ক্ষমতার জন্য পরিচিত। ঐতিহ্যগতভাবে, খরগোশ শিকারে এই দক্ষতা কাজে লাগানো হতো।
বাংলাদেশে বিগল:
যদিও বাংলাদেশে এখনও খুব বেশি দেখা যায় না। যদিও বিগল কুকুরগুলি তাদের মিষ্টি স্বভাবের জন্য ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একটি বিগল কুকুর কেনার আগে, নিশ্চিত করুন যে আপনি এর যত্ন নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন, কারণ এরা খুবই সক্রিয় কুকুর এবং তাদের প্রচুর ব্যায়ামের প্রয়োজন।
৬. গোল্ডেন রিট্রিভার (Golden Retriever)
সোনালী রিট্রিভার কুকুর, যাদের বাংলাদেশে “গোল্ডেন রিট্রিভার” নামেও ডাকা হয়। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কুকুরের জাত। তাদের সোনালী পশম, বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার এবং বুদ্ধিমান চোখের জন্য তারা পরিচিত। বুদ্ধিমান কুকুরদের কথা বললে এর নাম সবার আগে আসে। মিশুক প্রকৃতির জন্য এরা বিভিন্ন সিনেমাতেও জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষ করে-স্টার গ্রুপের “এয়ার বাড” “ফুল হাউস” “হোমওয়ার্ড বাউন্ড” ইত্যাদি সিনেমাতে এদের দেখতে পাওয়া যায়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- মাঝারি থেকে বড় আকারের কুকুর
- লম্বা, ঘন এবং সোনালী রঙের পশম
- শক্তিশালী শরীর
- ঝুলন্ত কান
- বাদামি বা হালকা বাদামি রঙের চোখ
স্বভাব:
- অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- বিশ্বস্ত ও অনুগত
- খুবই খেলাধুলোপ্রিয়
- শান্ত ও ধৈর্যশীল
- শিশুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে
- বুদ্ধিমান এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ
যত্ন:
- প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন
- দিনে দু’বার ভালো মানের খাবার দিন
- নিয়মিত গোসল এবং পশম পরিচর্যা করুন
বিশেষ দক্ষতা:
- সোনালী রিট্রিভার কুকুরগুলিকে তাদের দৃঢ় গন্ধ অনুসরণের ক্ষমতা এবং জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনার দক্ষতার জন্য পরিচিত। এই দক্ষতাগুলির জন্য তাদের বিভিন্ন কাজে, যেমন, থেরাপি কুকুর, উদ্ধারকারী কুকুর এবং শিকারের সহচর হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে সোনালী রিট্রিভার:
বাংলাদেশে এখনও অপেক্ষাকৃত কম দেখা গেলেও, সোনালী রিট্রিভার কুকুরগুলি তাদের সৌন্দর্য, বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, একটি সোনালী রিট্রিভার কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের সক্রিয় জীবনযাপনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন, কারণ এরা প্রচুর ব্যায়াম এবং মনোযোগের প্রয়োজন।
৭. শিহ তজু কুকুর (Shih Tzu)
বিলাসবহুল আলিশান পশম এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বই Shih Tzu কে পরিচিত করে তোলে। এই আলিশান পশমওয়ালা কুকুরগুলি তাদের মিষ্টি স্বভাব, বিশাল চোখ এবং লম্বা পশমের জন্য পরিচিত। ছোট আকারের এই কুকুর মনিবের সাথে সময় উপভোগ করতে বেশি পছন্দ করে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- ছোট আকারের কুকুর
- লম্বা, মসৃণ এবং ঘন পশম, সাধারণত বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ যেমন, সাদা, কালো, বাদামি, এবং খয়েরি
- চ্যাপ্টা মুখ
- বড়, গাল এবং কালো চোখ
- ঝুলন্ত কান
স্বভাব:
- বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- খেলাধুলোপ্রিয় কিন্তু অতি সক্রিয় নয়
- অনুগত ও মনোযোগী
- শিশুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে
- অপরিচিতদের প্রতি সতর্ক থাকতে পারে
যত্ন:
- নিয়মিত গোসল এবং পশম পরিচর্যা প্রয়োজন, বিশেষ করে চোখের পশম।
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন।
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের যত্ন নিতে হবে।
বিশেষ দক্ষতা:
- শিহ তজু কুকুরগুলিকে তাদের সঙ্গীদের সাথে থাকতে পছন্দ করার জন্য পরিচিত। ঐতিহাসিকভাবে, রাজকীয় পরিবারে সঙ্গী হিসাবেই এদের পছন্দ করা হতো।
বাংলাদেশে শিহ তজু:
শিহ তজু কুকুরগুলির যত্ন নেয়া কিছুটা জটিল হতে পারে, বিশেষ করে তাদের লম্বা পশমের কারণে। তবে, তাদের মিষ্টি স্বভাব এবং সঙ্গীসুলভ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে এরা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একটি শিহ তজু কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের যত্নের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
৮. বিচন ফ্রিজ (Bichon Frise)
বিচন ফ্রিজ সবথেকে ছোট জাতের কুকুরের মধ্যে অন্যতম। এটা দেখতে অনেকটা টেডিবেয়ারের মত। এদের তুলতুলে সাদা পশম পরিবারের শিশুদের সাথে মিশে যেতে সাহায্য করে। এলার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের পছন্দের তালিকায় এদের নাম সবার আগে কেননা এরা তুলনামূলকভাবে কম-শেডিং এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- ছোট থেকে মাঝারি আকারের কুকুর
- ঘন, কোমল এবং সাদা পশম, প্রায় কার্লড (curled) ধরনের
- গোল এবং কালো চোখ
- ছোট, কালো নাক
- ঝুলন্ত কান
স্বভাব:
- অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- খুবই খেলাধুলোপ্রিয় এবং চঞ্চল
- শান্ত ও কোলাহল পছন্দ করে না
- শিশুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে
- অপরিচিতদের প্রতি সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ
যত্ন:
- নিয়মিত গোসল এবং পশম পরিচর্যা প্রয়োজন, বিশেষ করে চোখের পশম পরিষ্কার রাখতে।
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন।
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের বেনি বাঁধুন।
বিশেষ দক্ষতা:
- বিচন ফ্রাইজ কুকুরগুলিকে তাদের চটপটে শেখার দক্ষতার জন্য পরিচিত। এরা সহজেই ট্রিক শিখতে পারে।
বাংলাদেশে বিচন ফ্রাইজ:
বিচন ফ্রাইজ কুকুরগুলি অ্যাপার্টমেন্ট বসবাসের জন্য উপযুক্ত, কারণ খুব বেশি দূরন্ত নয়। তবে, তাদের দীর্ঘ পশমের যত্ন নেওয়া একটু জটিল হতে পারে। যদি আপনি একটি মিষ্টি স্বভাবের, স্নেহময় এবং সঙ্গীসুলভ কুকুর খুঁজছেন, তাহলে বিচন ফ্রাইজ আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। তবে, কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের যত্নের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
৯.ডাচসুন্ড (Dachshunds)
ডাচসুন্ড প্রাণবন্ত এবং সাহসী কুকুরগুলির মাঝে অন্যতম। ডাচশুন্ড, যা বাংলাদেশে “ডাশহাউন্ড” বা “টেক্সেল” নামেও পরিচিত, একটি জনপ্রিয় কুকুরের জাত। লম্বাশরীর, ছোট পা,মসৃণ ওয়্যারহেয়ার এবং লম্বা গরন চমৎকার।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- দুই ধরণের পাওয়া যায় – স্ট্যান্ডার্ড (মাঝারি আকারের) এবং মিনিচার (ছোট আকারের)
- লম্বা, কম গাড়ির মতো শরীর
- কলো পা
- লম্বা এবং নরম পশম, বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে পাওয়া যায়, যেমন, বাদামি, কালো, এবং লাল
- লম্বা কান
- বাদামি বা কালো চোখ
স্বভাব:
- বীরত্বপূর্ণ ও সাহসী
- স্নেহময় ও বন্ধুত্বপূর্ণ
- খুবই খেলাধুলোপ্রিয়
- স্বাধীনচেতা ও দৃঢ় মনের
- কখনও কখনও অন্য কুকুরদের প্রতি আগ্রাসী হতে পারে
যত্ন:
- প্রতিদিনের ব্যায়াম প্রয়োজন, তবে সীমানিবদ্ধ এলাকায় খেলাধুলা করতে পারে
- দিনে দু’বার ভালো মানের খাবার দিন
- নিয়মিত গোসল এবং পশম পরিচর্যা করুন
বিশেষ দক্ষতা:
- ঐতিহাসিকভাবে, বাদশাহঘরের ছোট স্তন্যপায়ী শিকারে ব্যবহার করা হতো তাদের দৃঢ় গন্ধ অনুসরণের ক্ষমতার জন্য।
বাংলাদেশে ডাচশুন্ড:
ডাচশুন্ড কুকুরগুলি বাংলাদেশে এখনও অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়। তবে, তাদের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ স্বভাব, খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং সহচর হিসাবে উপযোগী হওয়ার কারণে এরা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, একটি ডাচশুন্ড কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের স্বাধীনচেতা মনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন এবং তাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতাগুলির কথা মাথায় রাখবেন।
১০.পেমব্রোক ওয়েলশ কর্গি (Pembroke Welsh Corgi)
পেমব্রোক ওয়েলশ কর্গি, যাদের বাংলাদেশে সংক্ষেপে ‘কর্গি’ নামেই ডাকা হয়। একটি জনপ্রিয় কুকুরের জাত। তাদের ছোট্ট লেংথি শরীর, বড় চোখ এবং খাড়া কানের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশেও, বিশেষ করে শহুরে এলাকায়, কর্গি কুকুরের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- ছোট থেকে মাঝারি আকারের কুকুর
- লম্বা, কিন্তু লেংথি শরীর
- ছোট্ট লেজ, সাধারণত জন্মের পরেই কাটা হয়
- খাড়া এবং ত্রিভুজাকৃতির কান
- বড়, বাদামি রঙের চোখ
- ঘন এবং দুই ধরণের পশম পাওয়া যায় – মসৃণ ও রুক্ষ
স্বভাব:
- বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহময়
- চঞ্চল ও খেলাধুলোপ্রিয়
- বুদ্ধিমান এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ
- সতর্ক ও সাহসী
- শিশুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে
যত্ন:
- প্রতিদিনের ব্যায়াম প্রয়োজন, তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের পরিচর্যা করুন
বিশেষ দক্ষতা:
- ঐতিহাসিকভাবে, খামারে গবাদি পশু হাঁকানোর কাজে ব্যবহার করা হতো তাদের দৃঢ় গঠন এবং দৌড়ানোর দক্ষতার জন্য।
বাংলাদেশে কর্গি:
কর্গি কুকুরগুলি অ্যাপার্টমেন্ট বসবাসের জন্য উপযোগী, কারণ তারা অত্যন্ত সক্রিয় নয়। তবে, তাদের ছোট্ট লেংথি শরীরে আত্মবিশ্বাসী মন থাকে।
১১.জার্মান শেপার্ড (German Shepherd)
জার্মান শেফার্ড বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি কুকুরের জাত। বাংলাদেশেও, বিশেষ করে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে, এদের চাহিদা বেশি। এরা তাদের বুদ্ধি, দৃঢ়তা এবং বিশ্বস্ততার জন্য বিখ্যাত। এরা মালিকের প্রতি এতো বিশ্বস্ত যে,নির্দিষ্ট কাজের জন্য সার্ভিস দেয় সঠিকভাবে ।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য:
- মাঝারি থেকে বড় আকারের কুকুর
- দৃঢ় ও পেশীবহুল শরীর
- লম্বা এবং ঘন পশম, সাধারণত কালো ও বাদামি রঙের মিশ্রণ
- ঝুলন্ত ত্রিভুজাকৃতির কান
- বাদামি বা হলকা বাদামি রঙের চোখ
স্বভাব:
- বুদ্ধিমান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ
- সাহসী ও নিরাপত্তার জন্য জনপ্রিয়
- বিশ্বস্ত ও অনুগত
- সক্রিয় ও কাজ করতে পছন্দ করে
- অপরিচিতদের প্রতি সতর্ক থাকে
যত্ন:
- প্রতিদিনের ব্যায়াম ও মানসিক উদ্দীপনা প্রয়োজন
- দিনে দু’বার উচ্চ-মানের খাবার দিন
- নিয়মিত ব্রাশিং করে পশমের পরিচর্যা করুন
বিশেষ দক্ষতা:
- জার্মান শেফার্ড কুকুরগুলিকে তাদের দৃঢ় গন্ধ অনুসরণের ক্ষমতা, দ্রুত গতিতে দৌড়ানোর দক্ষতা এবং শেখার ক্ষমতার জন্য পরিচিত।
- এ কারণে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদের পুলিশি কাজে, সামরিক সহায়তায় এবং সামরিক বাহিনীতে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে জার্মান শেফার্ড:
বাংলাদেশে জার্মান শেফার্ড কুকুর নিরাপত্তা কাজে, পাহারায় কাজে, এবং সঙ্গী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে, একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর কেনার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের প্রশিক্ষণ এবং যত্নের দায়িত্ব নিতে পারবেন। এরা অত্যন্ত সক্রিয় ও বুদ্ধিমান কুকুর, তাই তাদের মানসিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করা জরুরি।