fbpx
Tuesday, September 17, 2024
spot_imgspot_img
HomeLifestyleHealth & Fitnessবাঙালিদের রান্নায় পেঁয়াজ কেন এত জনপ্রিয়

বাঙালিদের রান্নায় পেঁয়াজ কেন এত জনপ্রিয়

সাধের মাংস রান্না অথবা মাছ কিংবা সবজি, সবকিছুতেই বাঙ্গালীদের যেন পেয়াজ ছাড়া চলে না। এমনকি বিকেলের নাস্তায় বিভিন্ন আয়োজনে আর মুড়ি মাখাতেও পিঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা দখল করে আছে। বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজর প্রচলন বিভিন্ন হলেও বাঙালিরা যেন পেঁয়াজকে মসলার সর্বোচ্চ স্থানে রেখে দিয়েছে। কি কারণ আজ জানব তারই বিস্তারিত।

পেঁয়াজ একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ। তবে অনেকে এটিকে সবজি বলে থাকেন। এখন হয়তো ভাবছেন, 

পেঁয়াজ তাহলে কি? চলুন তাহলে উত্তরটা খোঁজার চেষ্টা করি

পেঁয়াজ দ্বিবর্ষী বা বহুবর্ষী উদ্ভিদ হলেও এটাকে বার্ষিক উদ্ভিদ হিসেবে মনে করা হয়। পেঁয়াজ Allium গোত্রের উদ্ভিদ হলেও এটি কান্ডের বা বালব এর পরিবর্তিত রূপ। যা মাংসল পাতা দিয়ে আবৃত থাকে। অর্থাৎ পরিবর্তিত ভূগর্ভস্ত পাতা। সাধারণভাবে Allium cepa কে পিঁয়াজ বোঝায়।

বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ

পেঁয়াজ সবজি, নাকি মশলা

ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে পেঁয়াজকে সবজি হিসাব খাওয়া হয়। কেননা, অনেকে পেঁয়াজকে আমিষ মনে করলেও, তারা আবার এটিকে নিরামিষই মনে করেন। তবে এর জাত ভিন্ন। তাছাড়া ভিনেগার বা সিরকাতে ডুবিয়ে পিঁয়াজকে আচার বানানো যায়। 

পেঁয়াজ উৎপাদনে বিভিন্ন দেশ

বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনে চীন ও ভারত এগিয়ে। তবে চীনের স্থান সবার ওপরে। কেননা, বিশ্বের উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে চীনেই হয়, ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মহারাষ্ট্র ছাড়াও দক্ষিণ ভারত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে পেঁয়াজ ব্যাপক হারে চাষাবাদ হয়। আফগানিস্তানেও পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়। 

আর বাংলাদেশ প্রচুর পরিমানে পেঁয়াজের চাষ হলেও তা সঠিক সংরক্ষণের অভাবে এবং উপযুক্ত বাজার ব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রতিবছর ঘাটতি লেগেই থাকে। 

কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের মোট উৎপাদন প্রতিবছর প্রায় ২৫-২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে পাবনা জেলাতেই উৎপাদন হয় মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন। তার মাঝে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টনই  উৎপাদন হয় সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে।  এ দুটি উপজেলায় মোট পেঁয়াজ উৎপাদন এক পঞ্চমাংশ। এখানকার  চাষিরা কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও চারা (হালি) পদ্ধতিতে চাষ করেন।

এছাড়াও মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুরে  পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ থেকেই দেশের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হয়ে থাকে। বাকি চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ভারত ছাড়াও মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে।

পেঁয়াজ দেশ ভেদে বিভিন্ন প্রজাতির হয়। যেমন-জাপানি বাঞ্চিং পেঁয়াজ, গাছ পেঁয়াজ, কানাডা পেঁয়াজ ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন স্বাদেরও হয়। যেমন-ঝাঁঝালো, মিষ্টি , তিতা।

তবে পেঁয়াজ চাষের জন্য উর্বর বেলে-দো-আঁশ ও উঁচু জমি বা মাটি অতি উত্তম। তবে সেচ ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

পেঁয়াজে যে উপাদান রয়েছে-

পেঁয়াজকে গুণি সবজি বা মশলা বললে ভুল হবেনা। এটাতে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। 

যেমন- ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ফোলেট, বি৬- ভিটামিন এবং পটাশিয়াম।

পেঁয়াজের ব্যবহার-

আদিযুগ থেকে এর ব্যবহার হলেও, পেঁয়াজ নামটি শুনলেই সবার মাঝে যেন একধরণের খাদ্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়। পেঁয়াজ ব্যবহারে খাবারের স্বাদ হয় দ্বিগুণ। তাই দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেনি এ মসলা ছাড়া রান্নর কথা ভাবতেই পারিনা! অনেকটা বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষ যেমন অচল, তেমনি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না অচল। 

পেঁয়াজের যে এতো ব্যবহার! আপনারা কি জানেন, পেঁয়াজ কোন মৌসুমের মশলা বা সবজি? সব মৌসুমে পাওয়া গেলেও, পেঁয়াজ কিন্তু একটি শীতকালীন সবজি।

পেঁয়াজকে কাঁচা ও রান্না দু’ভাবেই ব্যবহার করা হয়। 

অনেকেই আছেন, যারা কাঁচা পেঁয়াজ খেতে খুবই পছন্দ করেন। মুড়ি মাখা, বিভিন্ন রকমের ভর্তা থেকে শুরু করে ভাত, সবকিছু্র সাথেই কাঁচা পেঁয়াজ খান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুখে স্বাদ আনতে পেঁয়াজ খেলেও, নিজেদের অজান্তেই শরীরের বিভিন্ন উপকারই করছেন তারা। কেননা, পেঁয়াজ অনেক অসুখকে নিরাময় করতে সহায়তা করে।

পেঁয়াজ কিভাবে আমাদের উপকার করে থাকে-

উপকারীতা

চুল পড়া রোধে সহায়তা করে:

চুলের পরিচর্যায় পিয়াজের ব্যবহার সমাদৃত। চুলকে ঝলমলে রেখে, ঝরা রোধে ও গজাতে পেঁয়াজ খুবই কার্যকরী। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা সালফার চুল পড়া, বিশেষ করে চুল ভেঙে যাওয়া বন্ধ করে লম্বা হতে সাহায্য করে।

রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে:

পরিমিত পেঁয়াজ গ্রহণ আমাদের হৃৎপিন্ডের জন্য খুবই উপকারী। এর মাঝে থাকা ভিটামিন, খনিজ, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া পেঁয়াজে উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তনালীগুলোকে শিথিল করতে ভাসোডিলেটর হিসাবে কাজ করে। যার ফলে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।

অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিসেপ্টিক হিসাবে কাজ করে:

পেঁয়াজ আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে থাকে। কেননা, এর মাঝে কার্মিনেটিভ, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক নামক পদার্থ রয়েছে। কাঁচা পেঁয়াজ কিন্তু আমাদের শরীরে যদি কোথাও সংক্রমণ হয়, তা রোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া ঠান্ডাজনিত সমস্যা গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি, জ্বর বা সামান্য গা ব্যথা হলে পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

পরিপাকে সহায়তা করে:

পরিপাকে র জন্য যে এনজাইম প্রয়োজন তা বাড়াতে পেঁয়াজ সাহায্য করে। এ কারণে,খাবার দ্রুত হজম হয়। যাদের পরিপাকে সমস্যা আছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন একটু কাঁচা পেঁয়াজ খান, তবে উপকার পেতে পারেন। 

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে:

ক্যানসার শুনলেই সবার মনে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। এই জটিল রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর বাঁচার সম্ভবনা অনেক কমে যায়। আর এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় পরিবারকে নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা করাই আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। গবেষণায় জানা গেছে, যদি নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া যায়, তবে তা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে,পাকস্থলীর কোলোন ক্যানসার থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

দাঁতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে:

বর্তমান সময়ে দাঁতের সমস্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে পেঁয়াজ চিবিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। কেননা, দাঁতের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা জীবাণুগুলো মারতে পেঁয়াজ এন্টিসেপটিকের কাজ করে। পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে​ সহায়তা করে:

এসময়ের একটি পরিচিত ঘাতক অসুখ ডায়াবেটিস। একটু অনিয়ম করলেই,সুগার বেড়ে কিডনি, চোখ, স্নায়ু, হার্টের নানা সমস্যা দেখা দেয়। একবার এ অসুখে আক্রান্ত হলে বাকিটা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ দারুণ কার্যকরী। 

হাড় মজবুত করে, শক্তি বৃদ্ধি করেতে সাহায্য করে:

হাড়ের মজবুত মানেই, ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়ামের কথা প্রথমেই চলে আসে। এছাড়াও হাড়ের গঠণের জন্য আরও কিছু উপাদান প্রয়োজন হয়। পেঁয়াজের মাঝে থাকা উপাদান সে চাহিদা পূরণ করে।

এগুলো ছাড়াও নার্ভ ট্রান্সমিশন, কিডনি ফাংশনের জন্য পটাশিয়াম জরুরি, যা পেঁয়াজে বর্তমান। পেঁয়াজে ক্যালোরি খুবই কম থাকায় অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সম্ভবনা থাকেনা। ফলে অতিরিক্ত ওজনের মানুষেরাও নিশ্চিন্তে পেঁয়াজ খেতে পারেন।

পেঁয়াজের ফুল

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে পেঁয়াজ খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে?

কাঁচা বা রান্না দুই অবস্থাতেই সমান উপকার পাওয়া যায়। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করলে তেল-মশলা একটু কম দিতে হবে।

এতক্ষণ পেঁয়াজের শুধু গুণগানই জানলাম। এরও নিশ্চয়ই কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে। আসুন এবার সেগুলো জেনে নেই-

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

অ্যালার্জি:

পেঁয়াজ গুণাগুণে ভরপুর হলেও অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। অ্যালার্জি ও ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি জার্নাল মতে, পেঁয়াজ হচ্ছে অ্যালার্জির অন্যতম একটি উৎস। যদি তারা পেঁয়াজ খান, তবে ত্বক এবং চোখে লালভাব, ত্বকের চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, শরীর জ্বলন প্রভৃতি অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

পেঁয়াজে ক্ষেত

মুখে অর্থাৎ নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে:

অতিরিক্ত পেঁয়াজ খাওয়া কিন্তু মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে । বিশেষ করে, বেশি পরিমাণে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে এমনটা হতে পারে। যার কারণে মানুষের সামনে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

লিভার ও অম্বলজনিত সমস্যা: 

পেঁয়াজের মাঝে থাকা ফ্রকটোজের মতো প্রাকৃতিক শর্করা  আমাদের অম্বলজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। পরিমাণে অধিক শর্করা হলে, আমাদের পেট হজম করতে পারেনা। ফলে পেট ফুলে যাওয়া, অস্বস্তি, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তবে কম পরিমাণে পেঁয়াজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি নয়। তাই সবার উচিত, পরিমাণের বেশি না খাওয়া।

অধিক পটাসিয়াম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা হলো পটাশিয়ামের কাজ। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকায় এটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে পরিমাণে বেশি পেঁয়াজ খেলে তা উল্টো বিক্রিয়া করে রক্তচাপকে মারাত্নকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে হাইপোটেনশনের জন্ম দিতে পারে। যার ফলে ক্লান্তি, হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হতাশা, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কথায় আছে না, অতিরিক্ত কোনকিছুই ভাল না!

চোখের সমস্যা হতে পারে:

আপনারা কি জানেন, পেঁয়াজের মাঝে সালফিউরিক এসিড নামে একটি উপাদান আছে, যার কারণেই কিন্তু পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বালাপোড়া করে এবং পানি ঝড়ায়।

আমরা কেন পেঁয়াজ বেশি খাই

বাঙালির খাবার মানেই ছিলো অল্প মশলায় সুস্বাদু রান্না। বর্তমানে আমাদের খাদ্যাভাসে বিদেশি খাদ্যের প্রভাবে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিদেশি রান্নায় মশলার ব্যবহার বেশি প্রচলিত। যার ফলে বাঙালির রান্নায় মশলার ব্যবহারও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের ব্যবহার। তাছাড়া মাছ এবং মাংসের গন্ধ এড়াতে পেঁয়াজ বেশি ব্যবহৃত হয়। যে কারণে দিনে দিনে পেঁয়াজের চাহিদাও বাড়ছে।

এই যে, রান্নায় এতো মশলা ব্যবহার করছেন! একবারও ভেবে দেখেছেন, এই খাবার আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর?

তাই বলবো, আমাদের মা, দাদি, নানিদের মত অল্প মশলায় রান্না করুন আর সুস্থ থাকুন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Elliana Murray on ONLINE SHOPPING
Discover phone number owner on Fake app চেনার উপায়