fbpx
Sunday, September 8, 2024
spot_imgspot_img
HomeEntertainmentবাংলা সিনেমার দুর্দান্ত খলনায়িকারা, যারা সকলের ঘৃণার পাত্রী

বাংলা সিনেমার দুর্দান্ত খলনায়িকারা, যারা সকলের ঘৃণার পাত্রী

একটা সময় মানুষের অন্যতম প্রধান বিনোদন ছিল হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। কবে কোন সিনেমা কবে মুক্তি পাবে সেটা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল থাকতো শিরোনামে প্রথম বিন্দুতে। সেসব সিনেমায় নায়ক কে আর নায়িকাবাই কে, তা নিয়েই চলত মাতামাতি।
খল চরিত্রেও বিভিন্ন অভিনেতার দাপট সকলকে উজ্জীবিত করত। কিন্তু বরাবরই নারী খল চরিত্রগুলো উপেক্ষিত থাকতো লোকমুখে। এসব নারী চরিত্র চিত্রনাট্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও আলোচনায় খুব একটা পাওয়া যেত না।
তবে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে কিছু কিছু চরিত্র অমর হয়ে থাকবে চলচ্চিত্র প্রেমিকদের মাঝে। হাড় হিম করে দেওয়া তাদের অভিনয় এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। সিনেমা দেখার পর তাদেরকে অনেকে সংসারের শান্তি বিনষ্টাকারী ভাবলেও বাস্তবে তারা কিন্তু মোটেও খল নন।
আজ থাকছে বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সেরা কয়েকজন নারী খল চরিত্র অভিনেত্রীদেরকে নিয়ে আয়োজন।

মায়া হাজারিকা

১. মায়া হাজারিকা

মায়া হাজারিকাকে সিনেমা পর্দায় খলচরিত্রের রাণীই বলা চলে। মাত্র ৫২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট জন্ম নেন ও ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মায়া হাজারিকা চলচ্চিত্র জগতে আসেন জহির রায়হানের ‘সংগম’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সময়ের প্রথম রঙিন ছবি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে।

তিনি যে-সব সিনেমায় অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছেন সেগুলোর মধ্যে- সাতরঙ, ক্যায়সে কহু, গুনাই বিবি, মিলন, নয়ন তারা, এইতো জীবন, যে আগুনে পুড়ি, বিনিময়, অমর প্রেম, অন্তরালে, সীমানা পেরিয়ে, অনুভব, মতিমহল, জীবন সাথী, সূর্যগ্রহণ, মনিহার, সূর্যকন্যা, সাধু শয়তান, এপার ওপার, চোখের জলে, ভুল যখন ভাঙ্গলো, অন্তরালে, যাহা বলিব সত্য বলিব, প্রিয়তমা, মধু মিলন, কন্যাবদল, টাকার খেলা, বাসর ঘর, বাদী থেকে বেগম, রূপালী সৈকতে, অনুরাগ, আরাধনা, বাদল, মাটির ঘর, মধুমতি, স্বামী, বৌরাণী, মন যারে চায়, নবাবজাদি, মধুমিতা, ছোট মা, ভালো মানুষ, অংশীদার, মৌচোর, সুখের সংসার, মাসুম, ভাংগা গড়া, ইশারা, রসের বাইদানী, মনা পাগলা, প্রেমিক, আশা নিরাশা, লড়াকু, অশান্তি, সোনার সংসার, বীর পুরুষ, দাঙ্গাফ্যাসাদ, দোলনা, অবদান, চাকর, বিসর্জন, সমর, কমান্ডার, রাক্ষস অন্যতম।

তবে তার স্বপ্ন ছিলো নায়িকা হবার। এই আশায় তিনি ঢাকার চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন। সহ-নায়িকা হিসেবে তার পথ চলা শুরু হলেও নায়িকা হবার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে যায়।

বেশির ভাগ চিত্রপরিচালকরা তাকে বেশি পছন্দ করতেন খলনায়িকার চরিত্রেই। এই কারণেই বাধ্য হয়ে অভিনয় করা শুরু করেন খলনায়িকার চরিত্রে। আর খলনায়িকা হয়েই পরবর্তীতে তিনি সিনেমা দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছিলেন। এটা সম্ভব হয় তাঁর অভিনয় প্রতিভার গুণেই।

সিনেমাগুলোতে তার চরিত্র ছিল অভিজাত পরিবারের শাশুড়ি/ অহংকারী মা। কোথাও বা ষড়যন্ত্রকারী বড় বোন/ভাবী। আবার কোনো কোনো সিনেমায় পতিতালয়ের কূটচরিত্রের সর্দারনি। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে তাকে যেমন মানিয়ে যেত যে কোনো ভূমিকায়, তেমনই চরিত্রকে বাস্তব করে ফুঁটিয়ে তোলার প্রতিভা ছিল তার।

২. রওশন জামিল

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র যেমন নায়ক বা নায়িকা হয়ে থাকেন, তেমনি বিশেষ চরিত্র বা গৌণ চরিত্র হলো খল চরিত্র। যা সিনেমার অন্যতম অংশ। কেননা এ চরিত্র ছাড়া যেন সিনেমাই জমে ওঠেনা। আর এ চরিত্রে অভিনয় করে রওশন জামিল দর্শকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সেই সময়ে অনেকেই তার অভিনয় দেখার জন্যই সিনেমা হলে যেত।

বেদের মেয়ে জোসনা

এই প্রতিভাবান শিল্পী ১৯৩১ সালের ৮ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। আর ২০০২ সালে ১৪ মে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আজ দেশের চলচ্চিত্র জগতে না থাকলেও, চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে একটি অংশ হয়ে দর্শকের মনে আজও জায়গা করে আছেন।

অভিনয় জীবনে তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘রক্ত দিয়ে লেখা’। এর মাধ্যমেই তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে পদার্পণ করেন।
আর এর ২ বছর পর তিনি সিনেমায় কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে আরব্য রূপকথা ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’এবং ১৯৭০ সালে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় অভিনয় করেন। আর এটি তাকে দারুণ সাফল্য এনে দেয়।

এরপর একে একে রওশন জামিল কাজ করতে থাকেন ‘নয়নমনি’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’র মতো সিনেমায়। আর এসব সিনেমায় তার অভিনয় ছিল অনবদ্য।

দীর্ঘ ক্যারিয়ার জীবনে তিনি অভিনয় করেন প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘মাটির ঘর’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘নদের চাঁদ’, ‘বাঁধনহারা’, ‘দেবদাস’, ‘লাল কাজল’, ‘আশার আলো’, ‘দহন’, ‘বেদের মেয়ে

জোছনা’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ‘লালসালু’।

অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি তার ক্যারিয়ার জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননাও লাভ করেছিলেন। যেমন- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, টেনাশিনাস পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার ইত্যাদি অন্যতম।

৩. রাণী সরকার

রাণী সরকার অভিনয় জগ তে আসেন মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা হলো ’দূর হে সুক্কা গাও’। এরপর ‘চান্দা’ ’নতুন সুর’ নামে আরও দু’টি সিনেমা করেন। আর প্রথম খল চরিত্রে অভিনয় করেন ‘কাঁচের দেয়াল, সিনেমায়। সিনেমাটি পরিচালনা করেন জহির রায়হান।

এছাড়া তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- আনোয়ারা, ফেরারী বসন্ত, স্বামী-স্ত্রী, থার্ড পারসন সিঙ্গুরার নাম্বার, দেবদাসসহ অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন।

অভিনয় নিপুণতার জন্য ২০১৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে।

৪. সুসমা আলম

বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়িকাদের মধ্যে যার নাম বা চেহারা সবার পরিচিত। তিনি হলেন অন্যতম সেরা অভিনেত্রী সুসমা আলম। বয়সে বড় হওয়াতে রীনা খানের মতো জাঁদরেল খলনায়িকার মায়ের ভূমিকাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। আর এই দুজন খলনায়িকা একসাথে যেসব ছবি করেছেন সেগুলোতে সাংসারিক অশান্তির মাত্রা এতোটা তীব্র হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু তাদের অভিনয়ের গুণে। আর নেতিবাচক অভিনয়গুলোতে সুষমার অভিনয়শৈলী ছিল দুর্দান্ত। এই অভিনেত্রীর আসল নাম শামসুন্নাহার।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাজমুকুট, বিন্দু থেকে বৃত্ত, অচেনা অতিথি, ফকির মজনু শাহ, ঘরের বৌ, পুনর্মিলন, মেঘমালা, অনুরাগ, নাগিনী কন্যা, সুন্দরী, হারানো সুর, লাল কাজল, লক্ষীর সংসার, বেদের মেয়ে জোসনা, বাংলার মা, ঘর দুয়ার, বিদ্রোহী বধূ, নির্মম, মায়ের দোয়া, এই ঘর এই সংসার, শাদী মোবারক,ছোট বউ প্রভৃতি।

হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে তিনি পজেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। অভিনয় করেছিলেন রাজকুমার ইলিয়াস কাঞ্চনের মা’র ভূমিকায়। আর ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিল ‘এই ঘর এই সংসার’ সিনেমার পার্সোনাল সেক্রেটারি হিসাবে জলহস্তিনী চরিত্রে। সে পার্সোনাল সেক্রেটারি হলেও, তাঁর নির্দেশ মত সব পরিচালনা হতো।
এছাড়াও কিছু কমেডি চরিত্রেও অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি কিছু নাটকেও কাজ করেছেন।
এই দক্ষ অভিনেত্রী ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মারা যান চলচ্চিত্রের এই খলনায়িকা।

৫. রিনা খান

সত্তরের দশকের একজন দক্ষ খলনায়িকা হলেন রিনা খান। খলচরিত্রের পাশাপাশি তাকে কিছু পজেটিভ চরিত্রেও দেখা গিয়েছে। তার নাম শুনলেই যেন দর্শকের মনে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাই নতুন করে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু্ই নেই।
চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে সোহাগ মিলন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই সিনেমাটি ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। তিনি তার অভিনয় জীবনে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি জানান খলনায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- সোহাগ মিলন, সবুজ সাথী, প্রেম যমুনা, মেঘ বিজলি বাদল, মহানায়ক, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, আমার প্রাণের স্বামী, পড়েনা চোখের পলক, ১৬ আনা প্রেম, সত্তা, দাগ হৃদয়ে, হৃদয় জুড়ে।
তবে তিনি আফসোস করে বলেন, যে ধরনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন তা আর এখনকার ছবিতে সেভাবে থাকে না। আফসোসের পাশাপাশি পরম তৃপ্তি নিয়েও তিনি বলেন, আমার প্রাপ্তি পুরো ষোলোআনা চলচ্চিত্র জগৎ থেকে। হয়ত এ অঙ্গনে আসতে না পারলে আজ আমার খ্যাতি, যশ, অর্থবিত্ত কিছুই হতো না বললেই চলে। তার ইচ্ছা ছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করা।

৬. দুলারী

আশির দশকের নারী খল চরিত্রের অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম দুলারী। তিনি ১৯৬৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার সাভারে জন্মগ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র জগতে তাকে সবসময়ে খল চরিত্রে দেখা গেলেও বাস্তব জীবনে তিনি পরোপকারী ও সমাজসেবক হিসেবে যথেষ্ট সুপরিচিত।

তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। এছাড়া তিনি এখনও অভিনয়ের সাথে জড়িত রয়েছেন। সম্প্রতি ‘দেশ নায়ক’ নামক বজলুর রাশেদের ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। দুলারীও তার দক্ষ অভিনয় দ্বারা প্রতিটি চরিত্র বাস্তব করে ফুটে তুলেছেন যা দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

টাল মাতাল, যেমন জামাই তেমন বউ, জয় বাংলা, নারীর শক্তি, ভালোবাসাপুর, মনের অজান্তে , আই লাভ ইউ প্রিয়া, মার্ডার ২, ভালোবাসার চ্যালেঞ্জ, ইভটিজিং, এর বেশী ভালোবাসা যায় না, পাগলা হাওয়া, চম্পা রানীর আখড়া, গোলাপী এখন বিলাতে, অরুণ শান্তি, স্বামী আমার বেহেশ্‌ত, ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না, বলবো কথা বাসর ঘরে, জীবন নিয়ে যুদ্ধ, পিরিতির আগুন জ্ৱলে দ্বিগুন, ঘরের লক্ষ্মী, তোমাকেই খুঁজছি, অমর সাথী, আমাদের ছোট সাহেব, শত্রু শত্রু খেলা, ক্ষমতার গরম, খেসারত, স্টেশনের রংবাজ, জ্বলন্ত নারী, দাঙ্গা দমন, বাংলার ডন, তেজী মেয়ে, বাংলার বউ, সর্দার, নিষ্পাপ কয়েদী, নগদ, ভালবাসা ভালবাসা, বিন্দুর ছেলে, কাবুলিওয়ালা, রসের বাইদানী, দজ্জাল শাশুড়ি, সিটি টেরর, দুর্ধর্ষ, নষ্টা মেয়ে, কঠিন পুরুষ, জীবনের গ্যারান্টি নাই, আজকের সমাজ, মহিলা হোস্টেল, যত প্রেম তত জ্বালা, চাই ক্ষমতা, মালা তুমি কার, ইতিহাস, রংবাজ বাদশা, স্বপ্নের বাসর, কষ্ট, মনে পড়ে তোমাকে, আলেয়া আমার প্রেম আমার অহংকার, গরীবের অহংকার, আম্মাজান, লাট সাহেব, ভুলনা আমায়, লাল বাদশা, পাগলা বাবুল, লুটতরাজ, মায়ের অধিকার, আজকের সন্ত্রাসী, আঞ্জুমান, প্রেমযুদ্ধ, দাঙ্গা, মিস লোলিতা।

৭.জাহানারা ভূঁইয়া

জাহানারা ভূঁইয়া সত্তরের দশকের একজন অভিনেত্রী। জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। তিনি শুধু অভিনেত্রীই ছিলেন না, একাধারে গীতিকার ও নির্মাতা হিসেবেও কাজ করছেন। গীতিকার হিসেবেই তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়াও ‘নিমাই সন্ন্যাসী’ সিনেমায় প্রথম গান লেখেন। যেটি ছিল তার স্বামী চিত্রপরিচালক সিরাজুল ইসলামের। আর খলনায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু হয় ‘সৎমা’ ছবি দিয়ে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, খলনায়িকা হিসাবে তিনি অভিনয়ের খাতায় নাম লেখান ‘সত্তা’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। যে সিনেমাটি ছিল আশির দশকের।
এ পর্যন্ত তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
একজন সঙ্গে ছিল (২০০৭), কাবুলিওয়ালা (২০০৬), যত প্রেম তত জ্বালা (২০০৪), রংবাজ বাদশা (২০০১), গরীবের অহংকার (১৯৯৯), নিষ্পাপ বধূ (১৯৯৮), আলিফ লায়লা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ (১৯৯৮), চিরশত্রু (১৯৯৭), জীবন সংসার (১৯৯৬), স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫), মহানায়ক (১৯৮৪) ।

তাছাড়া তার পরিচালিত ছবি ‘সিঁদুর নিওনা মুছে’ বেশ নাম করে। এই সিনেমায় শিশুশিল্পী চরিত্রে অভিনয় করা শিরীন জাহান আঁখি হলো তারই কন্যা। আর এখনও তিনি অভিনয় জগতের সাথে জড়িত আছেন।

৮. নাগমা

নাগমা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে ৯০ দশকের অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি আনুমানিক  ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারা যান।
তবে তিনি খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে শুধু চলচ্চিত্র অঙ্গনে নয়, দর্শকদের মনেও জায়গা করে নিয়েছেন। এই অভিনেত্রীর আসল নাম সালমা আক্তার লিনা। এই শিল্পী মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ’খুনের বদলা’য় অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম পদার্পণ করেন। তিনি প্রায় দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
তার অভিনীত সিনেমাগুরোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ, আখেরী জবাব, সাহেব নামে গোলাম, আসামী গ্রেফতার, স্বামী হারা সুন্দরী, বিষে ভরা নাগিন, ডাইনি বুড়ি, শক্তির লড়াই, চোরের রানী।

৯.শবনম পারভীন

অভিনয়ের শুরুতে তিনি মঞ্চে অভিনয় করতেন। এরই প্রেক্ষাপটে গ্রুপ থিয়েটারে একটি নাটকে অভিনয় করেন আর সেটি আইয়ুব সাহেব দেখেন এবং তাকে তার ‘আগুন পানি’ ছবিতে অভিনয় করতে বলেন। ১৯৮৫ সালের এ ছবিতে তার ভূমিকা ছিল নায়িকার চরিত্রে।
আর খলনায়িকা হিসেবে তার প্রথম অভিনয় ১৯৮৬ সালে ‘শুকতারা’ ছবিতে । এ পর্যন্ত খলনায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় শতাধিক ছবিতে।

তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দুই জীবন, শীষ মহল, লাওয়ারিশ, আপন ঘর, ঘর আমার ঘর, রানী চৌধুরানী, অমর সঙ্গী, ঘরের সুখ, মিয়া ভাই, গরীবের বৌ, শ্বশুর বাড়ি, প্রেম যমুনা, খুনের বদলা, ডিস্কো বাইদানি, ওরা লরাকু, ইমানদার মাস্তান, বাবা মাস্তান, সপ্নার ভালবাসা, বাচাঁও, অ্যাকশন লেডি, রজনীতি, রূপকথার গল্প, ইতিহাস, তোমাকে খুঁজছি, স্বামী হারা সুন্দরী, বলো না কবুল, বাবা মার স্বপ্ন, মৃত্যুদণ্ড, পাপি শত্রু, ভয়ংকর নারী, দুই দুয়ারী, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, তোমার জন্য মন কান্দে, প্রেমের অধিকার,মায়াবিনী ইত্যাদি।

শুধু বড় পর্দায় নয়, ছোট পর্দাতেও রয়েছে তার ব্যস্ততা। সমানতালে ছোট পর্দায় তার পদচিহ্ন রেখেই চলেছেন।
ইতি তোমার আমার, বিব্রত, বৃষ্টির অপেক্ষা, 14 ইঞ্চি- সাদা কালো, প্রেম জানে না রসিক কালা চান, ধোয়া তুলশী পাতা, এমন মজা হয় না, সমুদ্র বিলাশ প্রাইভেট লিমিটেড, ওপেন্টি বায়োস্কোপ, গৃহসুখ প্রাইভেট লিমিটেড, সবাই গেছে হাড়, তারা তিন জন, নগরে দৈত্য, চেলে দেখা, নাত্তো মঙ্গোলের কথা শুনে গুনি জোনে, তুরুপের তাস, পাত্র দেখা, জোরা শালিকসহ অসংখ্য নাটক ও ধারাবাহিকে তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

তাছাড়া হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নাট্যাংশে দীর্ঘদিন ধরে নানীর চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। এই অভিনয় শিল্পী ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

১০. নূতন

একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা নূতন যার আসল নাম রত্না চক্রবর্তী রমা। বর্তমানে তিনি খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছেন। নায়িকা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা সবার জানা। কিন্তু খলনায়িকা হিসেবেও তার পরিচিতি বাড়ছে। এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
মুস্তফা মেহমুদ পরিচালিত ১৯৬৯ সালে ‘নতুন প্রভাত’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে অভিষেক ঘটে। শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি ১৯৯১ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ’স্ত্রীর পাওনা’ চলচ্চিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়া তিনি যেসব সিনেমায় অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছেন, সেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- ওরা ১১ জন, ফকির মজনু শাহ, রাজদুলারী, সংগ্রাম, বসুন্ধরা, যদি জানতেম, রাঙা ভাবী, অলংকার, স্ত্রীর পাওনা, মহেশখালীর বাঁকে, শাহজাদা, কার পাপে, কন্যা বদল, চেনা মুখ, প্রেম বন্ধন, রাজমহল, সোনার চেয়ে দামী, বদনাম, সময় কথা বলে, আমার মা, প্রেম বিরহ, শিরি ফরহাদ, ব্যবধান, আওয়াজ, প্রান সজনী, গাদ্দার, গুলবাহার, তাজ ও তলোয়ার, সুরুজ, পাতাল বিজয়, অধিকার, অশান্ত, গৃহবিবাদ, সওদাগর, কাবিন, সৎ ভাই, মিঃ মাওলা, মালা মতি, রুপের রানী গানের রাজা, নাচে নাগিন, সাহস, পাগলা রাজা, আমি সেই মেয়ে, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, ক্রাইম সিটি, বলো না তুমি আমার, পুত্র এখন পয়সাওয়ালা, কি প্রেম দেখাইলা, অন্যরকম ভালোবাসা, মাই নেইম ইজ খান, হিরো: দ্য সুপারস্টার, আব্দুল্লাহ, এক বুক জ্বালা, দুই পয়সার আলতা।

১১. অরুণা বিশ্বাস

নায়িকা হিসেবে অরুণা বিশ্বাসের আগমন হলেও বর্তমানে তিনি খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছেন। তিনি মনে করেন সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করা দরকার। শুধু ইতিবাচক চরিত্র নয়, নেতিবাচক চরিত্রেও অভিনয় করে যেতে চান তিনি। ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন এই গুণী অভিনেত্রী।

চলচ্চিত্র জগতে নায়িকা হিসাবেই অভিষেক ঘটে নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’ সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমাটি ১৯৮৬ সালের ৬ জুন মুক্তি পায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ‘দুর্নাম’,‘সম্মান’,‘ কৈফিয়ত’, ‘দংশন’,‘ চরম আঘাত’, ‘বন্ধু বেঈমান’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’,‘প্রেম শক্তি’সহ আরো বহু সিনেমায় অভিনয় করেন। যেগুলো তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

এছাড়াও তিনি আরও যেসব সিনেমায় কাজ করেন- পরশ পাথর , মায়ের কান্না, গণ আন্দোলন, দয়াবান, মিস্টার মাওলা, মহা গ্যাঞ্জাম, সত্যের সংগ্ৰাম, হিংসার আগুন, খুনী আসামী, প্রেম প্রতিশোধ, বেনাম বাদশা, অবলম্বন।
২০০৬ সালের হিসাব অনুসারে ৪০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ধারাবাহিক নাটক ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন।

তিনি একজন বাংলাদেশী টেলিভিশন ও মঞ্চ অভিনেত্রী। এছাড়া তিনি যেসব মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন, সেগুলো হলো- কাজী নজরুল ইসলামের দোলনচাঁপা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বনের পাপিয়া ও দৃষ্টিদান এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শিয়রে আঁকা ছবি ও বড় দিদি।

একুশে টেলিভিশন এবং এনটিভিতে “খাদ্য কারাভ্যান” এবং “নাচী গানি নম্বর এক” এর মতো টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলো তিনি আয়োজন করেছিলেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নারী কল চরিত্র বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও তা নিয়ে কখনো সেভাবে আলোচনা বা সমালোচনার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। চরিত্রের মাধুর্যতার কারণে এসব ঘর চরিত্র বেঁচে থাকবে আজীবন।
women villains in bangla movie

আরো দেখুন
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করা বাংলা সিনেমা

RELATED ARTICLES

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Elliana Murray on ONLINE SHOPPING
Discover phone number owner on Fake app চেনার উপায়